চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজমের ধৃষ্টতার শেষ কোথায়
স্টাফ রিপোর্টার : ছোট নাম আজম। পুরো নাম ইকবাল আজম। চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সর্বোময় ক্ষমতার মালিক তিনি। তার আংগুলি হেলানোর সাথে নির্ভর করে কর্মকর্তা কর্মচারীদেও ভবিষ্যৎ। হাসপালের হেনো জায়গা নেই যেখানে মাতাব্বরী করা থেকে বিরত থাকেন তিনি। ২০১৭ সালের ১ মার্চ সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে মাত্র ২ বছরের মাথায় তিনি বনে যান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকুরি প্রবিধানমালার শর্ত অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা- কর্মচারী পাঁচ বছর চাকুরী করার পর তার কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক হলে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিএ থাকলে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এই নিয়োগবিধি অমান্য করে পতিত সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং এক মাফিয়া ডনকে ম্যানেজ করে মাত্র ২ বছরে বনে যান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে প্রবিধানমালার কোনো শর্তই অনুসরন করা হয়নি। তিনি কারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর হাসপাতালে শুরু করেন নানা ধরনের অনিয়ম। হাসপাতালে এমন কোন ডিপার্টমেন্ট নেই যে ডিপার্টমেন্টে তিনি অবৈধ হস্তক্ষেপ করেন না। সাধারণ তিনি সম্পাদক হাসপাতালে আসার পর তিনি কাউকে সাধারণ সম্পাদকের কাছে যেতে দিতেন না। সাধারণ সম্পাদকের সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি অফিসে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছেন। এদিকে সাধারন সম্পাদকের দোহাই দিয়ে বলতেন অমুকের সাথে কথা হয়েছে আপনি এটাই করবেন। শুধু কি এখানেই শেষ এক মেধাবী শিক্ষার্থীর সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষা প্রথম হলেও তাকে হাসপাতালে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন করে নিয়োগ বের্ডে প্রথম হওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাসান কবিরকে তার পদ থেকে কৌশলে সরিয়ে সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা পদে পদায়ন করে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজম নীল নকশা এঁকে হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ বাগিয়ে নেন। হাসান কবিরকে সমাজকল্যাণ বিভাগে বদলি করে তার সামনের পথ তিনি করেছেন খালি। শুধু সামনের পথ খালি করেই ক্ষান্ত হননি নিয়েছেন অবৈধ পদোন্নতি।
শুধু এখানেই শেষ নয় যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী পদন্নতির যোগ্যতা অর্জন করে তাদেরকে বিতি- ন্ন দোহাই দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতি না দিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। এর শিকার হয়েছেন হাসপাতালে স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক মোঃ জাকির হোসেন, প্রধান সহকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ল্যাব টেকনোলজিস্ট আবির মজুমদার। হাসপাতালে খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসবে আরো নানা তথ্য। তিনি হাসপাতালে হিসাব বিভাগ থেকে শুর করে সকল বিভাগ ম্যানেজ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। উচ্চমান সহকারী জসিম উদ্দিনকে কোনো কাজ না দিয়ে রোবট করে রেখেছেন। সকল রকম ফাইল উচ্চমান সহকারীর নিকট থাকার কথা থাকলে কোনো ফাইল তার কাছে নেই সব নিজের কাছে নিয়েছেন ইকবাল আজম।
এরপর শুর হয় নানা রকম ফন্দি টাকা কামানোর অজুহাতে সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে তৈরি করেন ডায়াবেটিক সিটি সেন্টার। এই সিটি সেন্টারের হিসাবপত্র তদড় করলে দেখা যাবে একজন দারোয়ানের বেতন হয়নি এই কবছরে। অথচ সিটি সেন্টার করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। সেই সিটি সেন্টারের নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজম।
একজন সংক্ষুব্ধ নাগরিক অভিযোগ করে বসেন হাসপাতালে সেক্রেটারি এবং সভাপতি ও কমিটির অন্যদের নিকট। সাধারণ সম্পাদক সেই অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি করে দেন। সেখানে আবার সেই নেতার হস্তক্ষেপ। নেতাকে দিয়ে ম্যানেজ করে বিভিন্নভাবে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন
নিজের তদন্তের বিষয় কিন্তু অভিযোগের তদন্ত হয়নি এখনও। এরপর আবার শুরু হয় রেডিওলজি বিভাগ নিয়ে খেলা। রেডিওলজি বিভাগে একজন অসহায় কর্মচারী শরীফুল ইসলাম চাকরি করতেন। তাকে চাকরি দিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ডাক্তার এম এ গফুর এবং ডাক্তার মোঃ রুহুল আমিন। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন যে রেডিওলজিস্টের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা আছে তাই শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে না তাকিয়ে শুধু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন। একজন নিয়মিত কর্মকর্তা হিসেবে বেশ ভালই চলছিল রেডিওলজিস্টের কাজ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজম নানা কারণে রেডিওলজিস্টকে বিরক্ত করা শুরু করেন। তিনি সার্টিফিকেটের দোহাই দিয়ে তাকে বহিষ্কার করে রেখেছেন এখনো পর্যন্ত। সম্পাদক বিষয়টি সুরাহার জন্যে হাসপাতালে ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেন। ৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তদন্তে বসেন। এখানে যে তথ্য বেরিয়ে আসে সেটি আরও ভয়ঙ্কর। তদন্ত কর্মকর্তারা দেখেন রেডিওলজিস্ট শুধু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি না দেখে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেহেতু নিয়োগ দিয়েছেন। তাই তদন্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে না পেরে রেডিওলজিস্টের তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রেখেছেন এখনো পর্যন্ত। এভাবে হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাম
রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। এছাড়াও বার্ষিক সাধারণ সভার নোটিস জারির পর নিয়ম বহির্ভুতভাবে আজীবন সদস্যপদ দেয়া হয় সাবেক সচিব মাকসুদুর রহমান পাটওয়ারী, ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর ও সুমন সরকার জয়কে কারণ তার ইচ্ছা ছিলো এদের কাউকে কমিটিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া। এই নথি
হাসপাতালে সমাজকল্যাণ কর্মকর্তার নিকট আছে। প্রবিধানমালা নিজের ইচ্ছামতো সংশোধন ও পরিবর্তন (নিজের পদ থেকে উপ-পরিচালকের পদ সৃষ্টি এবং অন্য পদ থেকে আর কেউ উপ-পরিচালক হতে পারবে না) উপ-পরিচালক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। তিনি কমিটি মেম্বার ও স্টাফদের সকলকে বলেন, প্রশাসন আমার হাতে আপনারা বাইরে বিষয় দেখবেন প্রশাসনিক বিষয়গুলো আমি দেখবো।'
নিজের ইচ্ছামতো কর্মচারী নিয়োগ দেয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই (যেমন-ড্রাইভার নাঈম, গার্ড নাঈমের বাবা ও সিনিয়র স্টাফ নার্স বিথীকা রাণী)। ড্রাইভার নাঈমকে দিয়ে হাসপাতালের গাড়িকে বানিয়েছেন পারিবারিক সম্পত্তি। হাসপাতালের ব্যয় বিল পর্যবেক্ষন করলেই বোঝা যাবে গাড়ি কার কার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমিতা কর্মকার ও মাস অফিসে না এসেও বেতন গ্রহণ করেছেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এছাড়া ডাঃ নাজমুল হাসান এ এই হাসপাতালের চাকুরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে পাশের চক্ষু হাসপাতালে চাকুরি নিয়েছেন। তিনি যে তারিখে অব্যাহতি চেয়েছেন সেই তারিখে অব্যাহতি না দিয়ে তার সাথে সখ্যতা করে ঈদ বোনাস পাইয়ে তারপর অব্যাহতি দিয়েছেন এটি উক্ত চিকিৎসকের ব্যক্তিগত নথি পর্যবেক্ষণে বেড়িয়ে আসবে। হিসাবরক্ষক শিপন বেপারী চাকুরি থেকে চলে যাওয়ার পর প্রধান সহকারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি হিসাবপত্রে গরমিল দেখানোর কারণে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিজের পছন্দমতো লোককে চেয়ারে বসানো হয়। নিজের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ধার দিয়েছে-কারণ হিসাবরক্ষকের ফান্ডে টাকা ঘাটতি ছিলো। অতীতে বারডেমের নিয়মিত ওয়ার্কশপ, সেমিনার সকল কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও ইকবাল আজম প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর অন্যদের সুযোগ না দিয়ে নিজেই অংশগ্রহণ করেন। নিজের স্ত্রীকে হাসপাতালের কোটায় বারডেমে চাকুরি দেয় টিবি প্রজেক্টে। এর বিনিময়ে হাসপাতালের টাকায় ইলিশ মাছ পাঠানো হয় বাডেমের কর্মকর্তাদের বাসায়।
হাসপাতালের আয়-ব্যয়ে ইন্টারনাল অডিট না করে নামমাত্র অডিটর দিয়ে বছরের পর বছর ইচ্ছামতো অডিট করানো হয়। যাতে কোনো অনিয়ম চোখে না পড়ে। যা বিগত অডিট রিপোর্টগুলো দেখলেই বুঝা যাবে। অফিসে কেউ কোনো অনিয়মের বিষয়ে কথা বললেই তাকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করা হয়। হাসপাতালের স্বাস্থ্য প্রশিক্ষক জাকির হোসেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন। কারণ তিনি সাধারণ সম্পাদকের কাছে লোক হওয়ার পরও নানা ভুল বুঝিয়ে তাকে পদোন্নতি বঞ্ছিত করেছেন। ডিপিপি প্রেরণের নামে বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় গাড়ি নিয়ে অবাধ যাতায়াত এবং টিএডিএ এক বিল করে নেয়। অফিসে আর কাউকে না জড়ানো-এতে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করছেন যা কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
হাসপাতালের সকল মালামাল সাজানো কোটেশনে ক্রয় করেছেন। এ কাজে সুভাষ চন্দ্র রায় সহযোগিতা করেছেন। কারণ ডাঃ বিশ্বনাথ পোদ্দার মালামাল যাচাই করেন, কোটেশন নেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি তার পরিচিতজনদের কাছ থেকে কোটেশন নিয়ে বিশ্বনাথ পোদ্দারকে দেন। তিনি সরল মনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেন।
এছাড়াও, হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্টকে নিম্নপদে নামিয়ে দিয়েছেন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আজম। এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা ভুয়া ফাইল নোট দিয়ে ফিজিওথেরাপিস্টকে নিম্নপদে নামিয়ে দিয়েছেন। বিনিময়ে তার অনুগত কয়েকজনকে পুরস্কৃত করেছেন পদোন্নতি দিয়ে।
এভাবেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি প্রশাসন, সুশীল সমাজের অনেক নামিদামি লোককে বিনামূল্যে/কমমূল্যে চিকিৎসা করিয়েছেন। এই হাসপাতালে আজীবন সদস্যবৃন্দ ২৫ পার্সেন্ট, কর্মকর্তা, ও কর্মচারী ৬০%, বাবা-মা, সন্তান ৩০% এবং মুক্তিযোদ্ধা ৩০% ডিসকাউন্ট পায়। ডিসকাউন্ট বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে হয়ে ও রেজুলেশনভুক্ত হয়েছে। এই কর্মকর্তা কোন ক্ষমতা বলে প্রশাসনসহ অন্যদের ডিসকাউন্ট দেন সেটাই এখন প্রশ্ন। এভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা করিয়ে তিনি তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। কারণ এই হাসপাতালের বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে একটি ফান্ড আছে সেখান থেকে দেয়া হয়। কিন্তু কোন ক্ষমতা বলে তিনি নিজেই এসব ডিসকাউন্ট দেন। এছাড়াও আন্তঃ বিভাগে ইচ্ছামতো বিল-কমানো ও বাড়ানো কাজ করেন তারই আজ্ঞাবহ হাসপাতালের গনসংযোগ কর্মকর্তা নাছিমা আক্তার। তিনি এ বিষয়ে বিল বাড়ানো ও কমানো কাজটি করেন।
হাসপাতালের সেক্রেটারী থেকে শুরু করে কমিটি অনেকেই তার দ্বারা অতীষ্ট। কিন্তু কেউ কোনো বিষয়ে মুখ খুলছে না অজ্ঞাত কারণে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইকবাল আজমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি কোন অন্যায় করেননি। কমিটি সদস্যরাই তাকে পছন্দ করে পদোন্নতি দিয়েছেন। অন্য সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
(ইউএইচ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪)