আশুজিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে অনিয়মের যত অভিযোগ
কেন্দুয়া প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের কেন্দুয়া উপজেলার ২ নং আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মঞ্জুর আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প কমিটির সভাপতি চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী নিজে থাকায় তাঁর ইউনিয়নের বীরগঞ্জ বাজারে দুই লাখ টাকার গণশৌচাগার ও রামপুর বাজারের গরুর হাটে দুই লাখ টাকার কাঁটা তারে বেড়ার কাজ না করেই সকল টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান।
জানা যায়, এই দুটি প্রকল্পের কোন প্রকার কাজ করেননি চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী। এলাকাবাসীর অভিযোগ বীরগঞ্জ বাজারে গণশৌচাগার (পাবলিক টয়লেট) ও রামপুর বাজারে নিরাপত্তার স্বার্থে গরুর হাটে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার জন্য হাট বাজারের ইউপি অংশের টাকা থেকে চার লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। দুটি প্রকল্পের সভাপতি নিযুক্ত হন ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী। কিন্তু কোন প্রকার কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা প্রকল্প কমিটির সভাপতির ক্ষমতাবলে উত্তোলন করে তা আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া রামপুর বাজারের ইজারার ৫% টাকা দ্বারা দুই লাখ টাকার উন্নয়ন কর্মসূচির আরেকটি প্রকল্প দেখিয়ে সে টাকাও তুলে নিয়ে যান। ২০২১-২২ অর্থ বছরের (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ দ্বারা আশুজিয়া জেএনসি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৫টি নতুন সিলিং ফ্যান ক্রয় না করে পুরাতন ফ্যান রং করে সৌজন্যে ফ্যানের মধ্যে নিজের নাম লিখে বরাদ্দকৃত ৮৪ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। ওই সময় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন চেয়ারম্যান নিজেই।
এছাড়া আশুজিয়া জেএনসি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি থাকা কালীন সময়ে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ভুয়া কাগজপত্র মূলে তার দুই পুত্রবধূকে কারিগরি শাখায় নিয়োগ প্রদান করেন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিকা-গম) প্রথম পর্যায়ে সিংহেরগাও গ্রামের নূরুল ইসলামের দোকান হতে কাদিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ৪ মেট্রিক টন বরাদ্দ নেন। একেই অর্থ বছরে সিংহেরগাও বড়বাড়ী হতে মঞ্জুর আলী চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে রানু মুন্সির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ নেন। অথচ এই প্রকল্প পাকা করনের কাজ চলছে। এছাড়া একই অর্থ বছরে সিংহেরগাও বড়বাড়ী হতে তালেব মেম্বারের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ নেন দুই লাখ টাকা। ঘোষখিলা ক্লিনিক হতে রশিদ মহাজনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের বরাদ্দকৃত তিন লাখ টাকার কোন কাজ করেননি।
এদিকে দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দকৃত সাড়ে ৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ দিয়ে নগুয়া কাদিরের ক্ষেত হতে হাকিম মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এবং ভগবতীপুর সঞ্জু মাষ্টারের বাড়ি হতে নগুয়া উত্তর পাড়া মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৪ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ নেন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের কাজ প্রাক্কলন মোতাবেক করা হয়নি। ওই প্রকল্প গুলির মধ্যে রয়েছে নগুয়া গ্রামের রতন মিয়ার বাড়ি হতে মালেকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসি করণ। সিংহেরগাও গ্রামের তিন রাস্তা হতে সালাম মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসি করণ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে একই প্রকল্পের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। প্রকল্প গুলোর মধ্যে রয়েছে সিংহেরগাও উত্তরপাড়া নূরুল ইসলামের দোকান হতে আব্দুল আজিজ মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সিসি করণ এবং সিংহেরগাও উত্তরপাড়া সাত্তার মিয়ার পুকুরের পশ্চিম প¦ার্শে প্যালা সাইডিং করণ।
আশুজিয়া ইউনিয়নে অতি দরিদ্রের ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় মোট শ্রকিকের সংখ্যা ১২৮ জন। কিন্তু চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী ভুয়া শ্রমিকের তালিকা দেখিয়ে অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিকের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসব শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিক এর সিম চেয়ারম্যান ও তার ছেলে মেহেদি হাসান রনির নিয়ন্ত্রনে রেখে ইচ্ছে মত টাকা উত্তোলন করেন। আরও অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী তার ছেলে মেহেদি হাসান রনির মাধ্যমে একটি বাহিনী তৈরি করেন। এই বাহিনীর লোকেরা দাপট দেখিয়ে ইউপি মেম্বারদের পর্যন্ত জিম্মি করে প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়ে যান। এসব অনিয়ম দুনীতির সুষ্ঠ তদন্তের দাবিতে আশুজিয়া ইউনিয়নের ভগবতীপুর গ্রামের হোসেন আলী ভূঞার ছেলে আব্দুল হেলিম ভূঞা গত ২০ আগস্ট নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সুষ্ঠভাবে তদন্তের নির্দেশ দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের উপ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: শাহিন মিয়া জানান, অভিযোগটি তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বুধবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন মূলক কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মো: মঞ্জুর আলী বলেন, বীরগঞ্জ বাজারের গণশৌচাগারের কাজ একটি ঘরে সম্পন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া রামপুর বাজারে গরুর হাটে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীরা রামপুর বাজারে একটি আনন্দ মিছিল বের করে। এসময় তারা কাঁটা তারের বেড়া ছিড়ে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলী প্রশ্ন রেখে বলেন, প্রকল্পের কাজ না করলে কোন সরকারি কর্মকর্তাগণ কী আমাকে বিল দিতেন। তিনি দাবি করেন আমি সুষ্ঠভাবেই কাজ করেছি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন।
(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪)