রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপডজেলার ঝাউডাঙা বাজারে আওয়ামী সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অবরোধ ও হরতাল কর্মসুচি চলাকালে হাফিজুর রহমান নামের এক ছাত্র শিবির কর্মী ও ভ্যানচালককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি গ্রামের সলেমান সরদার বাদি হয়ে সমাজের আলো ডট কম এর সাংবাদিক তুজুলপুরের বহুল আলোচিত ইয়ারব হোসেন ছাড়াও ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ জনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে আজ মঙ্গলবার এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক নয়ন কুমার বড়াল মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. অমিত কুমার রায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক, তদন্ত ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এসএম শওকত হোসেন, জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, অতিরিক্ত পিি অ্যাড. ওকালত হোসেন, গোবিন্দকাটি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক, ঝাউডাঙা কলেজের প্রভাষক রানা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সদর উপজেলার গোবিন্দকাটি গ্রামের লোকদান দফাদারের ছেলে হাফিজুর রহমান (২২) একজন শিবির কর্মী ও ভ্যানচালক। একই গ্রামের বরকতুল্লাহ এর ছেলে মামলার বাদি সলেমান সরদার নিহত হাফিজুরের ভগ্নিপতি। ২০১৩ সালে বিএনপি ও জামায়াত আওয়ামী সরকারের গণবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনব্যাপি অবরোধ ও হরতাল কর্মসুচি আহবান করে। এতে আওয়ামী লীগের গাত্রদাহ শুরু হয়।

এক পর্যায়ে ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৬টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা এসএম শওকত হোসেন, জজ কোর্টের পিপি কামারবায়সা গ্রামের অ্যাড. আব্দুল লতিফ ও অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলীর নেতৃত্বে সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ ২ থেকে ৪৩ নং আসামী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালিন সভাপতি এসএম শওকত হোসেনের বাড়িতে গোপনে বৈঠক করে। বৈঠকে পুলিশসহ সকল আসামীরা হরতল ও অবরোধ সফল না হওয়ার পক্ষে যত রকম তৎপরতা প্রয়োজন তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর, সদর সার্কেলের সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক সিদ্ধান্তটি চুড়ান্ত করে। ২৪ ডিসেম্বর সকাল সাতটা থেকে সাতক্ষীরা- নাভারন সড়কের ঝাউডাঙা বাজারে জামায়াত বিএনপি’র নেতা কর্মীরা পিকেটিং করার সময় দুই দিক থেকে ২ থেকে ৪৩ নং আসামীরা সেখানে পৌঁছায়। সকাল ৯টার দিকে তারা পিকেটারদের লক্ষ্য করে লেড বল, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউ- গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ ১৪ থেকে ৪৩ নং আসামীরা পিকেটারদের মারপিট করে। ইয়ারব হোসেনসহ পাঁচজন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও সদর সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে মোবাইলে খবর দিয়ে বাদির শ্যালক হাফিজুরকে মারিপট করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ভিকটিম হাফিজুরকে ঝাউডাঙা বাজারের হারানের দোকানের পাশে এনে তার নাকের মধ্যে গুলি করে। গুলি মাথার খুলি ভেঙে বেরিয়ে যায়। পরে পুলিশের পিকআপে করে হাফিজুরের লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে হাফিজুরের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় মসজিদের সামনে নামাজে জানাযা শেষে হাফিজের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীরের নির্দেশে থানায় গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি অনুকুল হওয়ায় এ মামলা দায়ের করা হলো।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪)