বৈষম্য বিরোধী মিছিলে গিয়ে প্রাণ হারান সজীব, শোকের সাগরে ভাসছেন স্ত্রী-সন্তানরা
সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ছাত্র জনতার মাঝে ঢলে পরে প্রাণ হারান সজীব চন্দ্র তালুকদার। গত ০৫ আগস্ট কেন্দুয়া উপজেলা সদরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলের মিছিলে অংশ নেন তিনি। পরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মিছিলের মাঝেই ঢলে পরেন তিনি। তার সহপাঠীরা ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কেন্দুয়া পৌর শহরের আরামবাগ মহল্লার বাসিন্দা শিক্ষিত কর্মক্ষম যুবক সজীব চন্দ্র তালুকদারে স্ত্রী পিংকি তালুকদার জানান, মিছিলে যাওয়ার আগে স্বামী বলেছিলেন ভালো কিছু রান্না করার জন্য। আমি তার কথামত রান্নাও করে রেখেছিলাম। কিন্তু সে খাবার তিনি আর খেয়ে যেতে পারেননি। গিয়ে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে, ফিরে এলেন লাশ হয়ে। আমার ছোট কন্যা পূর্বাষা এখনও মনে করে তার বাবা মিছিলে গেছে। সেখান থেকে ফিরে এসে তাকে নিয়ে ভাত খাবে।
আজ বুধবার কথা হয় পিংকি তালুকদারের সাথে, কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার স্বামীকে হারিয়ে আমরা শোকের সাগরে ভাসছি। সংসার পরিচালনার জন্য আমার স্বামীই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তিনি অকালে মৃত্যবরণ করায় দুই কন্যা সন্তান নিয়ে খুবই চিন্তাযুক্ত অবস্থায় আছি। কিভাবে তাদের লেখাপড়া করাবো, কিভাবে করবো তাদের ভরণপোষন।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা পিংকি তালুকদার বলেন, সরকারি চাকুরির বয়স নেই, তবে যদি সম্মানজনক ভাবে বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে ১৫/২০ হাজার টাকা বেতনের একটি চাকুরির সংস্থান হতো তাহলে আমি দুই কন্যাকে নিয়ে তাদের লেখাপড়াসহ ভরণপোষনের সমস্ত ব্যয়ভার মেটাতে পারতাম।
পিংকি তালুকদার বলেন, পরিবারের সমস্যার কথা তুলে ধরে গত ২৮ আগস্ট কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক ভাবে সাবেরুন্নেচ্ছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার বড় কন্যাকে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। পিংকি তালুকদার তার সন্তানদের ভবিষ্যত ও সংসার পরিচালনার জন্য সরকারের নিকট আর্থিক সহায়তার আকুল আবেদন জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, নিহত সজীবের পরিবারটিকে পুনর্বাসনের জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে চিন্তাই করছি। সরকারের পক্ষ থেকে যে কোন সহযোগিতাই আসে তা সজীবের স্ত্রী ও সন্তানরা পাবেন।
(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৪)