পদ্মানদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক
একে আজাদ, রাজবাড়ী : পদ্মাবিধৌত রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলার মধ্যে বালিয়াকান্দি ছাড়া চার উপজেলা সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা পদ্মা নদী তীরবর্তী। প্রতি বছর বর্ষায় বাঁধের বাইরে থাকা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও নদীর কোল ঘেঁষে শহররক্ষা বাঁধ থাকায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায় জেলাবাসী। তবে এবার ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার খবরে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এদিকে, বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়। নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভারতের ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় কারণেই রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক। তবে এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীর সব গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার নিচে থাকায় স্বস্তিতে রয়েছে জেলাবাসী।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডসূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ দশমিক ২০ মিটারের স্থানে ৬ দশমিক ৭৮ এবং সদরের মহেন্দ্রপুরে ১০ দশমিক ৫০ মিটারের স্থানে পদ্মার পানি রয়েছে ৮ দশমিক ১ মিটার।
পদ্মাতীরবর্তী বাসিন্দা মো. শাহজাহান জানান, শুনেছি ফারাক্কা বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীতে পানি আসেনি। এ পানি আসতে কয়েক দিন লাগবে। এখন তারা ভয়ে আছি, কখন পানি চলে আসে। এমনিতেই নদী ভাঙনে তাদের ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থায় যদি বন্যা হয়, তাহলে পরিবার-পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন বুঝতে পারছেন না।
পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা শুনেছেন ফারাক্কা বাঁধ ছেড়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রাজবাড়ীতে পানি আসে নাই। তাদের ফসলি জমি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বন্যা হলে আরও ভাঙবে। বন্যা হলে সবার জন্য কষ্টকর।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ ফারাক্কা বাঁধের গেট বর্ষা মৌসুমে কমবেশি খোলা থাকে। বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন রাজবাড়ীতে বন্যা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তার পরও বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো ধরনের সমস্যা মনে হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ জন্য উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সব দফতর, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। সাতটি আশ্রয়কেন্দ্র, ২৪টি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণকে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২৪)