মাদারীপুরে শেখ হাসিনা-শাজাহান খানসহ ৯২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
মাদারীপুর প্রতিনিধি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাওহীদ সন্ন্যামাত নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক চীফ হুইপ, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপসহ ৯২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচ সালাউদ্দিন। এর আগে রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে মামলাটি গ্রহণ করা হয়। মামলার বাদী মাদারীপুর জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই মাদারীপুর পৌর শহরের খাগদী এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ ও কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের সালাউদ্দিন সন্ন্যামাতের ছেলে তাওহীদ সন্ন্যামাত যোগ দেন। এ সময় গুলিতে নিহত হন তাওহীদ সন্ন্যামাত। পরে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় এই বিষয় নিয়ে কথা বলতেও ভয় পেতেন তারা। পরে এই ঘটনায় কামরুল হাসান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীয় সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক চীফ হুইপ, মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূর ই আলম লিটন চৌধুরী, মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপকে আসামী করা হয়েছে।
অন্য আসামীদের মধ্যে আরো উল্লেখ্যযোগ হলেন মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ, মাদারীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ছেলে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসিবুর রহমান খান, মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ভাই সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট ওবাইদুর রহমান খান ও তার আরেক ভাই মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খান যাচ্চু, কালকিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, কালকিনি পৌরসভার সাবেক মেয়র এসএম হানিফ, মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিক, সাধারণ সম্পাদক বায়েজিত হাওলাদারসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীদের আসামী করা হয়। এতে অজ্ঞাত আসামী রয়েছে আরো ৫০০ থেকে ৭০০ জনের মতো।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচ সালাউদ্দিন বলেন, কামরুল হাসান নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দিলে রোববার রাতে গ্রহণ করা হয়। এতে ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৭০০ মতো আসামী রয়েছে। এখন আইনগত যে ব্যবস্থা, তা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. শফিউর রহমান বলেন, আমাদের সদর থানার রবিবার রাতে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তবে এর আগে শনিবারও আরো একটা হত্যা মামলা হয়েছে। আমরা সকল মামলার সঠিকভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে একই ঘটনায় নিহত রোমান বেপারীকে (৩০) হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন। নিহত রোমান বেপারি মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের ভদ্রখোলা এলাকার ওমর বেপারীর ছেলে। তিনি পেশায় পিক আপভ্যানের চালক ছিলেন। মামলায় মাদারীপুর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নোবেল বেপারীকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।
তবে, মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনজন মারা যান। এই ঘটনায় রোমান বেপারি ও তাওহীদ সন্ন্যামাতের ঘটনায় মামলা হয়। এখন পর্যন্ত একই ঘটনায় মারা যাওয়া দীপ্ত দে হত্যার ঘটনায় তার পরিবার থেকে কোন মামলা করেনি।
(এএসএ/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০২৪)