রাঙ্গামাটিতে আ’লীগ সুশীলদের সাথে পার্বত্য উপদেষ্টার মতিবিনিময়
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময়ের নামে রাঙামাটিতে গত ১৫ বছরের আওয়ামী সুবিধাভুগীদের নিয়েই পার্বত্য উপদেষ্টা চা চক্র করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাঠে সক্রিয়কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী বিরোধী শিবিরেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের সময় যারা আওয়ামীলীগের মাধ্যমে দল নিরূপণ জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে ১৫ বছর যারা জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় সরকারী বিভিন্ন গ্রুপের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন, ওই একই মুখ গুলোকে নিয়েই শনিবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিএনপি জামাত তো বটেই জাতীয় পার্টিরও কোন নেতৃবৃন্দ বা আওয়ামী বিরোধী শিবিরের কোন সুশীল প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি।
এমনকি ডাকা হয়নি বিগত দিনে আন্দোলনে নেমে মার থেকে আহত হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কাউকে। ছাত্র প্রতিনিধির নাম করে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ ঘরানার নেতাদেরই সেখানে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, আমি এই মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে গিয়ে সে অনুযায়ী জেলা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব করব। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আওয়ামী ঘর আনার সুশীলরা কি নিরপেক্ষ জেলা পরিষদ গঠনে গঠনমূলক পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন?
উক্ত বৈঠকে স্বয়ং আওয়ামী লীগের বিনাভোটে তিনবারে নির্বাচিত প্রতিনিধির নিকটাত্মীয়, স্বজন থেকে শুরু করে জেলা আওয়ামীলীগের নেতা, আওয়ামীলীগের ইলেকশন ম্যানুকুলেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অন্যতম প্রধান দু’জন, আওয়ামীলীগের নিয়োগ দেওয়া বহুল বিতর্কিত অথর্ব মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্য, আওয়ামী ঘরানার পরিষদ মেম্বার, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাঙামাটি সদরে শেখ রাসেল ষ্টেডিয়ামের বরাদ্ধ মেরে খাওয়া প্রতিনিধি, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের শালা, আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা, জাগো হিন্দু পরিষদের নেতা, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন শিক্ষকসহ বিগত স্বৈরাচারি আওয়ামী সরকারের ১৫ বছর শাসনকালীন সময়ে বিভিন্নভাবে সুবিধাগ্রহণকারি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে পার্বত্য উপদেষ্ঠার বৈঠক রাঙামাটিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উক্ত বৈঠক শুরুর সময়েই উক্ত বৈঠকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তারা বের হয়ে যান। এমনটি জানানোর পর থেকেই উক্ত বৈঠক নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে আমন্ত্রন জানানো নিয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তালিকা করা হয়নি; পার্বত্য উপদেষ্টা মহোদয়ের সহকারী কর্তৃক যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেই তালিকা অনুসারেই আমরা সকলকে জানিয়েছি। এখানে জেলা প্রশাসক বা আমাদের কোনো হাত নেই।
এদিকে,রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আজকে রাঙামাটিতে উপদেষ্ঠা আসবেন এবং ডিসি অফিসে মিটিং করবেন এমন কোনো তথ্য আমাদেরকে জানানোই হয়নি।
অপরদিকে, রাঙামাটির রাজপথে আন্দোলনকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সারাদেশে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকের অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হলো এবং সেই আন্দোলনকারীদের সাপোর্টেই সরকারেরই একজন উপদেষ্ঠা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে রাঙামাটি সফরে এসেছেন।
এখানে এসেই সেই স্বৈরাচারি সরকারের লোকজনদের সুশীল সমাজ সাজিয়ে তাদের কাছ থেকে রাঙামাটি জেলা পরিষদ পুর্নগঠন নিয়ে মতামত গ্রহণ করলেন পার্বত্য উপদেষ্টা।
এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে আগামীতে রাঙামাটিবাসীর ভাগ্য নির্ধারণ কারা করবে কি করবে এবং কাদের মনোনীত প্রতিনিধি রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারে বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং রাঙামাটির ভবিষ্যৎ কি হবে এখনই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছে রাঙামাটির সচেতন মহল।
(আরএম/এএস/আগস্ট ২৪, ২০২৪)