সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরবে দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি কেবি পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।

আজ শনিবার বেলা ১২টায় স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবু বিশ্বনাথ গুপ্তের হাতে এ পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। এ সময় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বর্তমান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আরাফাত, শোভন, আবির, রিদম ও সাজু বলেন, আমরা কয়েকদফা প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করেছি। একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছিলেন। অনুষ্ঠান না হওয়ায় এ বিষয়ে স্যারের সাথে আলোচনা করতে আসলে তিনি কোন হিসাব ও সদুত্তর দিতে পারেনি। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষক, দারোয়ান ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে আসলে তিনি চাঁদাবাজীর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আমরা স্যারকে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক পরিচালক আরমান মিয়া বলেন, আমি স্কুলে দীর্ঘদিন অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দায়িত্ব ছাড়ার পর বিভিন্ন অভিভাবক ভর্তি বাণিজ্যের, শিক্ষকরা নিয়োগ বাণিজ্যের ও স্কুলে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ আমার কাছে আসে। আজকে এ স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহলের লোকজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসেছি। এ সময় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন।

এ বিষয়ে স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা ৪০ জন খ-কালীন শিক্ষক শিক্ষিকাকে স্যার একদিনে বিদায় দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছে করলে আমাদের বেশ কয়েকজনকে রাখতে পারতো। আমাদেরও পরিবার রয়েছে। এখন এ সরকারি স্কুলে একাধিক শাখা থাকার পরও ১৮ জন শিক্ষক নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে। শিক্ষক সংকটের কারণে ২ শাখা একসাথে করে ক্লাস করানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে আসলে তিনি চাকুরী বাবদ ১ লক্ষ টাকা করে ঘুষ দাবী করেন।

এ বিষয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, আমি এনটিআরসি শিক্ষক নিবন্ধনের মাধ্যমে সুপারিশ প্রাপ্ত হই। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাকুরীতে আসি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার অফিস সহায়ক সাদেক মিয়ার মাধ্যমে আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে। তিনি নিজেও ঘুষ চান। আমি ঘুষ না দেয়ায় আমাকে চাকুরীচ্যুত হতে বাধ্য করে।

এর আগে ২০২১ সালে অতিরিক্ত ক্লাস নামে স্কুলের মধ্যে কোচিং বাণিজ্য শুরু করে পরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চাপে তা বন্ধ করতে হয়। এছাড়া স্কুলের ভর্তি বাণিজ্য বিষয়েও একাধিক অভিযোগ উঠে। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তোপের মুখে তৎকালীন সাবেক ইউএনও সাদেকুর রহমান সবুজ মৎস কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসার’কে সদস্য করে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তদন্ত কমিটির তদন্ত করে জমা দেয়া রিপোর্ট অদ্যবধি পর্যন্ত আলোরমুখ দেখেনি। পরবর্তীতে জানা যায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমান সবুজ ৫ লাখ টাকা ঘুষ খেয়ে তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা দিয়ে দেয়।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম জানান, আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি। তাই আমি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।

(এসএস/এসপি/আগস্ট ২৪, ২০২৪)