গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে ৭টি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুরে বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সাতটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে আটটা থেকে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন চেরাগাআলী এলাকায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সহস্রাধিক শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সকাল ৮টায় কাজে যোগদান না করে কারখানার সামনে কাঁঠালদিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে।
বেলা ১২ টায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জিএম) ব্রিগেডিয়ার (অব:) মেহবুব হক সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৮টা থেকে কিছু ঝামেলা ছিল। দুপুরে তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।
প্রায় একই সময় টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড নামক কারখানায় শ্রমিকরা জুলাই মাসের বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে যার যার জায়গায় বসে পড়ে। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র জ্যাকার্ড সেকশনের (৯০ জন) শ্রমিকের বেতন ১৫ আগষ্টে পরিশোধ করেছে। বাকীদের বেতন দিচ্ছে না। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ এর আগেও দুই তিনবার বেতন পরিশোধের দিন ধার্য করেছিল কিন্তু শ্রমিকদের বেতন দেয়নি বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের মালিক হাজী সাইফ উদ্দিন জানান, কিছু শ্রমিকের বেতন দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যা হওয়ায় বাকীদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এদিকে টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকায় মাইশা মীম এ্যাপারেলস লিঃ এর শ্রমিকেরা সকাল আটটা থেকে জুলাই মাসের বেতনের দাবিতে কাজ বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। দুপুর পর্যন্ত তাদের অবস্থান কর্মসূচি চলছিল।
এই কারখানার মালিক আলী আজম সরকারকে ফোন দিলে তিনি বার বার ফোন কেটে দেন।
এ ছাড়া বকেয়া বেতনের দাবীতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মালেকের বাড়ি এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে অন্তত কয়েক কিলোমিটার সড়কে এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকাগামী ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা সকাল থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
শ্রমিকরা জানায়, টিএনজেড গ্রুপে আমরা তিন হাজার তিনশ শ্রমিক কাজ করি । এ ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের জুলাই মাসের বেতন মঙ্গলবার পরিশোধ করার কথা থাকলেও আমাদের বেতন পরিশোধ না হওয়ায় আন্দোলন করছি।
এদিকে, বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে দুটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা কারখানা ত্যাগ করে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চন্দ্রা এলাকার হরতকিতলা এলাকায় অবস্থিত মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানার কর্মচারীদের ৫ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের ২ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকরা একাধিকবার মালিক পক্ষের নিকট বকেয়া বেতন আবেদন করলেও মালিকপক্ষ বিষয়টি সমাধান করেনি। পরবর্তীতে বুধবার সকালে শ্রমিক ও কর্মচারীরা কারখানায় গিয়ে বেতন দাবি করেন। এক পর্যায়ে তারা কারখানা ত্যাগ করে দুপুর ১ টার দিকে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে নেমে পড়েন। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শাহাদাত হোসেন জানান, বেতনের দাবিতে চন্দ্রায় শ্রমিকরা সড়কে নেমেছে। যার ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ। বিষয়টি সমাধানের পর বিকেলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় মাস্টার চ্যান ইন্ডাস্ট্রিজের লিংকিং সেকশনের আনুমানিক ১৩০/১৪০ জন শ্রমিক পিস রেট, বাৎসরিক ছুটির টাকা ও অন্যান্য দাবি নিয়ে সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করে। দুপুরের দিকে শ্রমিকরা অন্যান্য সেকশনের কাজ বন্ধ করে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য মালিকপক্ষ ককারখানা বন্ধ ঘোষনা করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাকিব হোসেন।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, বুধবার সকাল থেকেই কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দাবিগুলো জেনে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকপক্ষের সাথে আলোচনায় বসে সমাধান করতে থাকি। এতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক, তারা বেতন ভাতাসহ কয়েকটি ধাপে দাবি জানিয়ে আসছিল। বতর্মানে মহাসড়ক স্বাভাবিক আছে।
(এস/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২৪)