ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী
পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ, একজনের মরদেহ উদ্ধার
ফেনী প্রতিনিধি : ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনীর উত্তরাঞ্চলের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লাখের বেশি মানুষ। তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রামের ঘর-বসতি ও রাস্তা-ঘাট। বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন ওই এলাকায়। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ফুলগাজীতে মো. রাজু নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সে ফুলগাজীর দক্ষিণ শ্রীপুর পশ্চিমমাথা এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে। উদ্ধার করা হয়েছে সহস্রাধিক মানুষকে।
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট ও আমজাদহাট ইউনিয়নের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহরসহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে বন্যা হচ্ছে।
এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের ছালেও ছুঁয়েছে বন্যার পানি। এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় খুঁজছেন স্থানীয়রা। বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম।
স্থানীয়রা জানায়, গত মাসের মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা যায়। সেসব স্থানে মেরামতের পর চলতি মাসের শুরুতে বাঁধের আরও ১২ স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় বন্যায় বাঁধে ভাঙনে প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম। অবকাঠামো, ধান, ফসল ও মৎস্যে ক্ষতি ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ১৫ দিনের মাথায় আবার দেখা দিল বন্যা।
পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, ‘আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। অনেকে বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে বুঝতে পারেনি। কোন প্রকার পুর্ব ঘোষনাও ছিলনা। এখন কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। এছাড়া সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। খাবার ও পানি নেই। সর্বত্র হাহাকার।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, ‘স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গতরাত ১২টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় দুটি ডিঙি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন লোক নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।আমাদের নিকট আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।’
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, ‘উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১০ টা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় দুটি নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাজু নামে একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের নিকট আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, ‘মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
ফেনী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মুনীর হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।’
ফেনী জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ত্রাণ সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।’
(এম/এসপি/আগস্ট ২১, ২০২৪)