গিয়েছিলেন মিছিলে ফিরে এলেন লাশ হয়ে
অকালেই ঝরে গেল তরতাজা যুবক তোফাজ্জলের প্রাণ
সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলন শুরু হলে ছাত্র জনতার আন্দোলন ও মিছিলে যোগ দেন তোফাজ্জল। গিয়েছিলেন অধিকার আদায়ের মিছিলে কিন্তু ফিরে এলেন লাশ হয়ে। ফলে অকালেই ঝরে গেল তরতাজা যুবক তোফাজ্জলের প্রাণ। আদরের সন্তান তোফাজ্জলের মৃত্যুর পর থামছেনা পরিবারের সদস্যদের কান্না। বিশেষ করে তোফাজ্জলের মা হারেছা খাতুন বলেন, আমার ছেলের তো কোন অন্যায় করেনি? তবে কেন তারে কুপাইয়া প্রাণে শেষ করে দেওয়া হলো? কাঁদতে কাঁদতে তিনি চোখ থেকে এক সাগর পানি ঝরিয়েছেন। এখন আর কাঁদতে পারেন না তিনি।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের পিজাহাতি গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে তোফাজ্জল। তার বয়স ২০ বছর। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে তোফাজ্জল বড়। জীবিকার তাগিদে প্রায় ৩ বছর আগে গাজীপুরের আরএকে সিরামিক্স কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন তিনি। পিতৃহীন সংসারের হাল ধরতে তোফাজ্জল তার মা হারেছা এবং ছোট ভাই মোফাজ্জলকে নিয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় পারি জমান। কাজ শুরু করেন আরএকে সিরামিক্স কোম্পানিতে। স্বপ্ন ছিল চাকুরি করে অর্থ উর্পাজনের মাধ্যমে সংসার সাজাবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
পারিবারিক সূত্রে জানায়, প্রতিবাদী এই যুবক চলতি বছরের ৪ জুলাই ভালুকার জৈনা বাজার এলাকায় অংশ নেন ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিলে। এক পর্যায়ে দূর্রত্তরা তাকে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে দেহ ডান পা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
তার ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন জানান, ভাই আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে বেসরকারি দুটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ওই হাসপাতাল দুটোতে ভর্তি না করায় অবশেষে শ্রীপুর উপজেলা হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত বলে ঘোষনা করেন। সেখান থেকে ৫ জুলাই সন্ধ্যার আগে তার মরদেহ আনা হয় পিজাহাতি গ্রামের বাড়িতে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নামাজের যানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার ফুফুর কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
আজ সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় তার দোচালা টিনের ঘরটিতে তালা ঝুলছে। মা, ছোট ভাই এবং বোনেরা যার যার কর্মে চলে গেছেন। মুঠোফোনে তার বড় বোন আকলিমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে, কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের কোন অন্যায় ছিল না। গিয়ে ছিল অধিকার আদায়ের মিছিলে। কিন্তু আমার ভাইকে সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে কুপিয়ে ডান পা আলাদা করে দেয়। আমার ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সে বিয়ে করবে, সাজাবে সুন্দর সংসার। পরিবারের সদস্যদের বরণ পোষন ও আমাদের বিয়ে দিতে গিয়ে সংসারে প্রায় ২ লাখ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। আমার ভাই চেয়েছিল সেই ঋণের টাকা কাজ করে পরিশোধ করবে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমার ভাইয়ের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হতে দেয়নি। আমি সরকারের কাছে ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। সেই সাথে আমার ভাই মরে যাওয়াতে অসহায় হয়ে যান আমার মা। মায়ের বরণ পোষন ও সংসার পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই। আপনারা আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। যেন আমার ভাই শান্তিতে ঘুমাতে পারে।
কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মজনু জানান, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম হিলালীকে নিয়ে তোফাজ্জলের বাড়িতে গিয়েছি। তার কবরের পাশে গিয়ে দোয়া করেছি। সরকার যেন তার পরিবারের সব দাবি পূরণ করে সেই দাবিটুকু আমরাও করছি।
(এসবি/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০২৪)