সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গত ৫ আগস্টের সহিংসতায় থানায় হামলার পূর্বেই সেনাবাহিনীর অভিযান চালিয়ে উদ্ধারকৃত অস্ত্রসহ বিভিন্ন মালামাল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। 

আজ শনিবার সকাল ১১টায় হাজী আসমত সরকারি কলেজে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলামের কাছে অস্ত্রসহ সকল মালামাল বুঝিয়ে দেন ভৈরব সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার লে. কর্ণেল ফারহানা আফরীন। এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনগণ থানায় থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও মালামাল সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার করে। ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ একই সাথে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, মেজর মো. সানজেদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মো. রায়হান রেজা, ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রেদুয়ান আহমেদ রাফি, রেলওয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আলীম সিকদার, শহর ফাঁড়ি ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভৈরব থানা ও শহর ফাঁড়িসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এদিকে ওইদিন ঘটনার আগমুহুর্তে সেনাবাহিনী ভৈরব থানার অধিকাংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে দুস্কৃতিকারীরা থানা চত্বরে ভাঙচুর করে কিছু সংখ্যাক অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিভিন্ন ধরণের ফার্ণিচার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি লুট করে নিয়ে যায় ও থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপরই পুলিশ গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনী ভৈরবের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় লুট হওয়া কিছু অস্ত্র, গোলাবারুদ, মোটরসাইকেল, অটো রিকশা, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মেজর মো. সানজেদুল ইসলাম বলেন, ভৈরবের ছাত্ররা প্রশংসনীয় কাজ করেছে। শুরু থেকেই ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষ ও ছাত্ররা তাদের নিজ উদ্যোগে ভৈরব থানা থেকে লুট হওয়া কিছু সংখ্যাক অস্ত্র উদ্ধারে সহযোগীতা করেছে। উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে শর্টগান, মেশিন গান, চায়না রাইফেল, পিস্তল, এলএমজি, গ্যাস গান, টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ। ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করছে। পৌর স্টেডিয়ামে অস্থায়ী কার্যালয়ে থানার কার্যক্রম চলছে। মূল থানার সংস্কার কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা অস্থায়ী কার্যালয় থেকে তাদের মূল থানায় ফিরে যাবে।

এ সময় থানায় হামলার বিভিষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে ভৈরব থানা অফিসার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে দুস্কৃতিকারীরা নাজমুল হাসান পৌর পার্কে আক্রমণ করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। থানার পাশে পার্কটি হওয়ায় থানা ভবনটি কালো ধুয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। পরে আমরা বুঝতে পারি আমাদের উপরও আক্রমণ হতে যাচ্ছে। তখন আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রাণে বেঁচে বের হই। পরবর্তীতে থানাতে ভাঙচুরসহ বিভিন্ন গাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেই দুস্কৃতিকারীরা। এ সময় তারা কিছু অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের সহযোগিতায় লুট হওয়া অনেক মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আজ থেকে আমরা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারবো। আমরা আন্দোলনের শুরুতেও জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি এখনও ভৈরবের সাধারণ মানুষের জানমালের রক্ষার্থে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাবো। এ সময় তিনি কাজের গতি ফেরাতে ভৈরবের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে ভৈরব ক্যাম্প কমান্ডার লে. কর্ণেল ফারহানা আফরীন বলেন, ভৈরব থানা পুলিশের কাছে তাদের অস্ত্রসহ বিভিন্ন মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা চাই পুলিশ তাদের কাজে ফিরুক। ভৈরবে আইন শৃঙ্খলার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। পুলিশ তাদের কাজে ফিরলে আমরা আমাদের ব্যারাকে ফিরে যাবো।

(এস/এসপি/আগস্ট ১৭, ২০২৪)