ফরিদপুরে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল
রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুরের বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার বিকেলে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে উক্ত কর্মসূচির আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ফরিদপুর জেলা, কোতোয়ালি থানা ও শহর শাখা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ফরিদপুর জেলা শাখা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ ফরিদপুর জেলা শাখা, এবং সংখ্যালঘু হিন্দু মোর্চা ভুক্ত সংগঠন সমূহ।
এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট তুষার কুমার দত্ত, অ্যাডভোকেট মানিক মজুমদার, ছাত্রনেতা দীপ্র রাজ কুন্ডু , সাগর রায়, সৌম্য সাহা প্রমূখ। এ সময় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ হিন্দু সমাজ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, হত্যা, মন্দির ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং অবিলম্বে এ কাজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাদের হত্যা করা হয়েছিলো। আর এখনো হিন্দুরা পদে পদে মার খাচ্ছেন এখনো তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা এ ব্যাপারে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সমস্যা নিরসনে একই সাথে নয় দফা দাবি পূরণ করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। অন্যথায় আগামীতে আরো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও সভায় হুঁশিয়ারি ব্যক্ত করা হয়।
দাবিগুলো হলো-
এক. গত কয়েকদিনে দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর ভাঙচুর, লুটপাট নির্যাতনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা এবং নিরীহ সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী ও জনসাধারণকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান।
দুই. সীমান্ত সংলগ্ন যেসব অঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়ি ছেড়ে সীমান্তে চলে যাওযার তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাদের উপযুক্ত নিরাপত্তা ও সম্মানের সহিত নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনা। প্রয়োজনবোধে সরকারি উদ্যোগে তাদের গৃহ নির্মাণ ও পূনর্বাসন করা।
তিন. হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে পূর্ণাঙ্গ রূপে হিন্দু ফাউন্ডেশন হিসেবে নিবন্ধন এবং তার সামগ্রিক কর্মপরিসর ও অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধি করে কোনো প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ব্যক্তি ব্যতীত নিরপেক্ষ ও সনাতনীদের প্রকৃত শুভচিন্তক ব্যক্তিদের দ্বারা পুনর্গঠন।
চার. সরকারের সকল পর্যায়ে সংখ্যালঘুদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
পাঁচ. বিদ্যমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ন্যায় পৃথক, স্বতন্ত্র 'জাতীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন' গঠন, যা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করে আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তাপূর্বক ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সাহায্য করবে।
ছয়. সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় স্থাপনায় বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান এবং আক্রমণের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন। পরিস্থিতি পূর্ণরূপে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে এই ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান।
সাত. বিশেষ 'সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিশেষ গুরুত্বের সাথে সংখ্যালঘুদের মন্দির, ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের দ্রুততম সময়ে বিচার এবং দৃষ্টান্তমুলক শান্তি নিশ্চিত করা।
আট. সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও উৎসব নির্বিঘ্নে যথাবিধি পালন হওয়ার ব্যাপারে উপযুক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
নয়. পূর্ববর্তী সরকারের আমলসহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, নির্ধাতন, ধর্ষণ, অগ্নিযোংগের বিচার নিশ্চিত করা।
(আরআর/এসপি/আগস্ট ১১, ২০২৪)