স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়া হবে। সুস্থ থাকলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও জানান তিনি।

গতকাল শনিবার আওয়ামী লাগ সরকারের পতন ও দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব এনডিটিভিকে বলেছেন, “কিছু বিচ্ছিন্ন হামলা হয়েছে। সেগুলো সুসংগঠিত (সিস্টেমেটিক) হামলা নয়। এসব হামলা চালিয়ে কিছু মানুষ চলমান পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের বা অন্য কোনো দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় যখন কোনো পরিবর্তন আসে, কিছু মানুষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের প্রতিটি বিপ্লবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা—তারা হিন্দু বা মুসলমান যে ধর্মের হন না কেন, শিকারে পরিণত হন।”

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি “অসাধারণ” উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হয়ত বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা হয়েছে। তবে সেগুলো কোনোভাবেই সুসংগঠিত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।”

দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি যেকোনো সময়ে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বলেও জানান মির্জা ফখরুল। তবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন আয়োজনের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “পুরো নির্বাচনব্যবস্থাই দূষিত হয়ে গেছে। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের অবস্থায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থায়ও সংস্কার আনতে হবে তাদের।”

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন, অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবেন।”

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এমন দাবি করেছেন। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সেখানে কোনো জবরদস্তি বা এমন কিছু ছিল না। এটি ছিল একটি বিপ্লব। যখন লাখ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন, তখন তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী তাকে দুটি বিকল্প দিয়েছিল। একটি হলো থেকে যাওয়া এবং বিক্ষুব্ধ জনতার মুখোমুখি হওয়া। অপরটি হলো দেশ ছেড়ে যাওয়া। আর শেষ মুহূর্তে তিনি (শেখ হাসিনা) দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।”

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের বিষয়ে মির্জা ফখরুল এনডিটিভিকে বলেন, “তিনি হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।”

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “এমন কোনো কিছু ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “এই আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের নেতৃত্বে হয়েছে। তাদের অধিকাংশেই অতি প্রগতিশীল। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই অসাধারণ মেধাবী। আমি বিশ্বাস করি, এই বিপ্লব অবশ্যই সফল হবে।”

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে তিনি বলেন, “জামায়াত চরমপন্থী দল নয়। তবে বাংলাদেশে চরমপন্থী কিছু গোষ্ঠী ছিল, সেগুলোর অস্তিত্ব এখন আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।”

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১১, ২০২৪)