রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে পুলিশের কার্যক্রম না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। লুটপাটে বাধা ও ঘর থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় গৃহকর্তৃকে মারপিটের পর জমিতে থাকা গাছগাছালি কেটে তছনছ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের দাউদ আলী পাড়ের বাড়িতে এ ঘটনার পর ওই পরিবারের সদস্যরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বন্দকাটি গ্রামের দাউদ আলী পাড় জানান, শতাধিক বছর আগে তার দাদা কেদার পাড় একই এলাকার শীতল মণ্ডলের কাছে বন্দকাটি মৌজার সিএস ৪৬০ খতিয়ান ও সিএস ২৪৬ দাগের ৫৭ শতক জমি বন্দক রাখেন। ওই জমি ছাড়িয়ে নেওয়া হলেও দখল ছাড়েননি ফটিক মোড়লের ওয়ারেশরা।

একপর্যায়ে ওই জমিসহ সাড়ে ৫ বিঘা জমি সিএস রেকর্ড কেদারপাড়ের নামে এবং এসএ রেকর্ড তার বাবা মান্দার পাড়ের নামে হয়। ২০১৮ সালে ওই জমি (বন্দকী) তারা দখলে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন। ওই জমির মধ্যে ৫৭ শতক তাদের দাবি করে ফটিক মোড়লের ওয়ারেশ হিসেবে জহুরুল ইসলাম মোড়লের ছেলে অহিদুজ্জামান মোড়ল, মোয়াজ্জেম মোড়লের দুই ছেলে মাহামুদুল হাসান ও মোখলেছুর রহমানসহ সাত জন বাদি হয়ে তাকেসহ পাঁচজনকে বিবাদী করে সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে রেকর্ড সংশোধনের (টাইটেল শুট-৮৩/২০১৮) মামলা দায়ের করেন। বাদিপক্ষ ৫৭ শতক জমির ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রায় ও ১৩ সেপ্টেম্বর ডিক্রী পান। ওই রায় ও ডিক্রীকে কাজে লাগিয়ে বাদিপক্ষ জমি থেকে বিবাদীপক্ষকে উচ্ছেদের জন্য জারি মামলা করেন। একপর্যায়ে তাদেরকে উচ্ছেদ করার জন্য আদেশ হয়।

দাউদ পাড় আরো বলেন, বাদিপক্ষের রায় ও ডিক্রীর বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ(নুরুল হক পাড়, দাউদ পাড়) মহামন্য হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন ৯০৯/২০২২ দায়ের করেন। আদালত নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করে উভয় পক্ষকে ছয় মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্থিতাবস্থা জারির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানালে বাদি পক্ষ নোটিশ পাওয়ার পরও আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিল না করায় বিচারক জাকির হোসেন মূল মামলার বাদিপক্ষের বিরুদ্ধে রুল জারির আদেশ দেন। একই আদেশে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেওয়া হয়।

দাউদ পাড়ের স্ত্রী হোসনে আরা বানু জানান, জারি মামলার রায় পাওয়ার পরও হাইকোর্টের নির্দেশের কারণে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে পারেনি মোয়াজ্জেহাম মোড়লের ওয়ারেশ ও অহিদুজ্জামান মোড়লরা। একপর্যায়ে তারা সন্ত্রাসী ভাড়া করে তাদেরকে উচ্ছেদ করার পায়তারা করে আসছিলো। এমনই পরিস্থিতিতে গত ৫ আগষ্ট দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সাতক্ষীরা জেলা ও দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সাতক্ষীরার আটটি থানা থেকে পুলিশ চলে যায়। সাধারণ মানুষ পড়ে নিরাপত্তাহীনতায়। ঝোঁপ বুঝে কোপ মারতে স্বামী দাউদ পাড় ও ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থ শিমুল বাড়িতে না থাকার সূযোগে মোস্ত, মোবারেক, মোক্তার, ভোলা সামছুরের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ৬ আগষ্টা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তাদের বাড়িতে হামলা চালায়।

এ সময় হামলাকারিরা তাদের চারটি বসত ঘর ও একটি রান্না ঘর ভাঙচুর ও ছাগল, হাঁস ও মুরগিসহ দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সাহিমা সুলতানাসহ তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে তারা জমিতে থাকা কলার বাগানসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কেটে সাবাড় করে দেয়। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে লুটপাট চালানোর হয়। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তাদেরকে বাড়িতে তুলে দিলেও ঘর বাসযোগ্য না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। বিষয়টি সাতক্ষীরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে অহিদুজ্জামান মোড়লের সঙ্গে কথা বরার চেষ্টা করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্নর করে দেন।

(আরকে/এএস/আগস্ট ০৯, ২০২৪)