রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী সাতক্ষীরায় হামলা, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অব্যহত থাকায় পাড়ায় পাড়ায় রাত জেগে পাহারা বসানো হয়েছে। বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটের হাত থেকে বাঁচাতে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। পুলিশ কর্মবিরতি ঘোষণা করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারিরা রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছেন।

সোমবার বিকেলে শ্যামনগর উপজেলার পরানপুর বাজারের নিমাই রপ্তানের ইলেকট্রনিকস দোকান ভাঙচুর শেষে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামালা লুটপাট করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে নিমাই মণ্ডলের চায়ের দোকান, পরেশ গাইনের ঔষধের দোকান, কওছার আলীর কাপড়ের দাকান। যতীন্দ্রনগরের আহম্মদিয়া সম্প্রদায়ের সেলিনা সাঈদ, এজাজ আহম্মেদ, আব্দুল মজিদ সরদার, রবিউল ইসলাম, মতিয়ার রহমান, ও শফিকুল ইসলামসহ কমপক্ষে ১২ জনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সুন্দরবন বাজারের সেলিম সরদার ও সুফিয়ান সরদারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। শেখ মাহাফুজুর রহমানের জমি ও মতিউর রহমানের জমি ও ঘের দখল করা হয়েছে।।

মঙ্গলবার রাতে তালার মাদ্রা গ্রামের শিক্ষক কুষ্ণপদ মণ্ডলের কাছে মোবাইলে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। কুমিরা গ্রামের স্পন কুমার দে, মণ্টু ঘোষ, প্রদীপ পাল, অচিন্ত্য ঘোষ, আশিষ ঘোষ, অচিন্ত্য ঘোষ, মাগুরার দেবাশীষ মুখার্জী ও ইসলামকাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সুভাষ সেনের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পাটকেলঘাটার শিবু ঘোষের মিষ্টির দোকান থেকে ৩০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল, ঘের থেকে ১৫টি ছাগল ও লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। শেকের হাটের এসিআই এর ডিলার জিয়ালা গ্রামের স্বদেশ ঘোষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে ৩০ লাখ টাকার মালামাল ও সুভাষ ঘোষের দোকান থেকে ১৭৫ কুইন্টাল চাল, হাড়ি পাতিল ও মুদি দোকানের মালামাল লুট করা হয়েছে।

তালার দুগ্ধগ্রাম বলে খ্যাত জিয়ালা নলতা গ্রামের দিবস চন্দ্র ঘোষ, প্রশান্ত ঘোষ, বনমালী ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, অমূল্য ঘোষ, ক্ষিতিশ ঘোষ, লিপ্টন ঘোষ ও পিন্টু ঘোষের গরুর খামারে গত ৫ আগষ্ট থেকে বিশেষ পাহারা দিতে প্রতি রাতে খামার পিছু ১০ হাজার টাকা দিয়ে তিনজন করে লোক নিয়োগ করতে হচ্ছে। টাকা কম দিলে পাহারাদার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রতিটি খামার মালিকের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হচ্ছে। সোমবার রাতে মহান্দি গ্রামের রমেশ ঘোষের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় রেজাউল জোয়ারদারের নির্দেশে সাঈদ, গগন, সাত্তার ও মিন্টুসহ কয়েকজন খামার থেকে ছয়টি গরু নিয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে ৫০ হাজার টাকা মজির ছেলে সাত্তারের মাধ্যমে মন্টর কাছে পাটিয়ে গরু ফেরৎ পাওয়া যায়। সুজিত ,নির্মল ও খোকন ঘোষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদ্য়া করেছে ওই চক্রটি। এ ছাড়া আশাশুনি উপজেলার খাজরা বাজারে প্রদীপ চক্রবর্তীর মুদি দোকান, ইউপি সদস্য বিপ্লব দাসসহ কমপক্ষে সাতটি দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

কলারোয়ার সরসকাটি বাজারের পরিতোষের মালিকানাধীন সাধনা টেইলার্স এন্ড টেক্সটাইল , সত্য সাহার মুদি দোকান, মোকলেছুর রহমানের গার্মেন্টস দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে মঙ্গলবার বিকেলে। বুধবার বিকেলে ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলামকে পার্শ্ববর্তী বরনডালি গ্রাম থেকে ধরে এনে মারটি করা হয়েছে। তিনি এখন কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বুধবার রাতে সাতক্ষীরা সদরের বালিয়াডাঙা গ্রামের বাবুল হোসেন, আবু জাফর, নাজমুস শাহাদাৎ পলাশ, মাগফুর হোসেনের বাড়ি ও শাহাজান ওরফে ছোট বাবুর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তবে বালিয়াডাঙা গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে জেল পালানো আসামী মনিরুল ইসলাম ওরফে বাক্স মনির, বাবুলিয়া গ্রামের মুজিবর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এসবক লুট্পাটে ভূমিকা রাখছেন বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানিয়েছেন।

এদিকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের হাত থেকে বাঁচতে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন বাজারে, পাড়ায় ও মহল্লায় স্থানীয়দের উদ্যোগে রাত জেগে পাহার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে তালা উপজেলার মাগুরাডাঙা, কলাগাছি হরিণখোলা, বারুইপাড়া, ধুলন্ডা, শ্যামনগরের নকিপুর, কাচড়াহাঁটি, বুড়িগোয়ালিান, মুনিসগঞ্জ, কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর, ফতেপুর, বিশ্বনাথপুর, কুশুলিয়া, উজিরপুর, চম্পাফুল, আশাশুনির মহিষাডাঙা, তুয়ারডাঙা, বড়দলম করারোয়ার সরসকাটি, জয়নগর, মুরারীকাটি, সদরের দেবনগর ঝাউডাঙা, মাধবকটিসহ বিভিন্ন স্থানে রাত্রীকালিন পাহারা জোরদার করায় সুফল মিলছে।

তবে থানায় পুলিশ না থাকায় আনছার বাহিনীর সদস্যরা অস্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের সাথে ট্রাফিকের দায়িত্ব এবং পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ৫ আগষ্ট বিকেল থেকে জেলায় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে বৃহষ্পতিবার শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তুলতে দেখা গেছে।

তবে ৫ আগষ্ট বিকেল থেকে পূর্ববিরোধকে কাজে লাগিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার মত প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে অনেকেই ঘের, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জবরদখল করতে ব্যস্ত রয়েছেন।

(আরকে/এএস/আগস্ট ০৮, ২০২৪)