১৪ দফা
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে বিএনপি ও কোটা বিরোধী ছাত্রদের বৈঠক
একে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান ও পুলিশ সুপার জি.এম. আবুল কালাম আজাদের (পিপিএম) সাথে বৈঠক করেছেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম সহ কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা।
আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে ১৪ দফা দাবী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট তুলে ধরেন। এসময় বিএনপি নেতা ও কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় এই বিপ্লবে শাসকগোষ্ঠি পরাভূত হয়েছে। অবসান হয়েছে স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের। জনমনে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের এক সুবর্ণ আশা সঞ্চারিত হয়েছে। আজ আবু সাইদ, মুগ্ধ সহ শত শত শহীদের মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার এই মহাবিপ্লব সংগঠিত হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলার সকল শান্তিকামী জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের এক জনপদ আওয়ামীলীগ সৃষ্টি করেছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এই জনপদে আইনের যথেচ্ছা ব্যবহার জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
সেই প্রেক্ষিতে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা ও প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে দল-মত নির্বিশেষে সকল পেশা ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে আবহমান কালের সহাবস্থান ও সম্প্রীতি যেটি বজায় ছিল তা পূণরায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, সে প্রেক্ষিতে স্থানীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার করে জনমনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নিম্ন-বর্ণিত বিষয় সমূহ কার্যকরের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে:
১. শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এসকল ঘৃণ্য কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন তাদেরকে অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
২. প্রশাসনিক সকল কাজ গতিশীল করার লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিশেষত পুলিশ ও প্রশাসনকে জননিরাপত্তা বিধানের লক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
৩. জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকান্ড যাতে ক্ষতিগ্রন্থ না হয় সেই লক্ষে সকল প্রকৌশল বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগনের সমন্বয় সভা করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কাজ গতিশীল করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
৪. রাজবাড়ী জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, ধর্মীয় ও বিদ্যানুরাগী ও বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সভা আহ্বান করে জনগণের শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৫. ব্যাপক অনিয়ম ও অবৈধ পন্থায় গঠিত বিভিন্ন স্থানীয় কমিটি ভেঙে দিতে হবে।
৬. বাস-মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, চেম্বার অব কমার্স, শিল্পকলা একাডেমী, জেলা ক্রিড়া সংস্থা, বিভিন্ন কলেজের পরিচালনা পর্ষদ, বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতি সহ সকল প্রতিষ্ঠান সমূহে এডহক কমিটি গঠন করে আইন সম্মতভাবে আগামী ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
৭. যে সকল সংস্থায় দীর্ঘদিন যাবৎ (পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠন) নানা ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয় নাই সেই সকল প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. জরুরী ভিত্তিতে নদী-ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৯. সকল পর্যায়ে ঘুষ-দুর্নীতি রোধ কল্পে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. জেলার রেজিস্ট্রি অফিস ও বিভিন্ন সংস্থা সমূহে দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামী লীগের ছাত্রছায়ায় মানুষের নিকট থেকে জোড়পূর্বক চাঁদা, ফিস, কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
১১. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সকল ধর্মের স্থানীয় প্রতিনিধিগণের সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
১২. সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের সাথে সভা করে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান সমূহে যথাযথ পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
১৩. বাস-ট্রাক, সিএনজি, অটোরিক্সা, নসিমন, করিমন সহ সকল যানবাহন থেকে সকল প্রকার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
১৪. সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় সম্প্রীতি সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
(একে/এসপি/আগস্ট ০৭, ২০২৪)