পেয়ারার কেজি ২০ টাকা, লোকসানের মুখে চাষিরা
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : বাজারে অন্যান্য মৌসুমি ফলের ভীড়ে কদর কমেছে পেয়ারার। খুচরা বাজারে ২০ টাকা কেজিতে পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে এবং বাগান থেকে ৪০০-৫০০ টাকা মণ দরে অর্থাৎ ১০-১২ টাকা কেজি দরেও পেয়ারা কেনার খদ্দের পাচ্ছেন না চাষিরা। এরইমধ্যে দেশে চলমান অস্থিরতা এবং কয়েকদিন কারফিউ এর কারণে পেয়ারা বিক্রি নেই বললেই চলে। ফলে উৎপাদন খরচের চেয়ে স্থানীয় বাজারে পেয়ারার বর্তমান দামের কারণে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন ঈশ্বরদীর পেয়ারা চাষিরা। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে পেয়ারার বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ এবং অবিক্রিত থাকার কারণে বাগানেই পঁচে যাচ্ছে পেয়ারা।
বাগান থেকে পেয়ারা কিনে ভ্যানে ফেরী করে এবং বাজারের দোকানগুলোতে বিপুল পরিমাণ আমদানি হলেও ক্রেতা নেই। বিক্রি না হওয়ায় দোকানেও পঁচে যাচ্ছে পেয়ারা। বাগানে এবং দোকানে পেয়ারা পঁচে যাওয়ায় চাষিদের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন লোকসানের মুখে। এ অবস্থার জন্য আম-কাঁঠালের আমদানি ছাড়াও চলমান পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন চাষীরা। তাই পেয়ারা কেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধ্বস নেমেছে।
লোকসানের চরম বিপর্যয়ের মুখে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। জাতীয় পদকপ্রাপ্ত পেয়ারা চাষি আমজাদ হোসেন বলেন, হতাশায় প্রহর গুনছে এ অঞ্চলের সহস্রাধিক পেয়ারা চাষি। চাষিরা প্রকৃত মূল্য না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। ফলন ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও জানান, দুই মৌসুমে আষাঢ়ের মাঝামাঝি এবং শীতের পৌষ মাসে শুরু হয় পেয়ারার মৌসুম। বর্ষায় পোকা-মাকড়ের কারণে বাগানে বিপুল পেয়াড়া নষ্ট হয়। এবারে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য জেলার ফড়িয়ারা আসতে পারছে না।
২২ বিঘা জমিতে পেয়াড়ার আবাদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিক্রি না হওয়ায় বাগানেই অনেক পঁচে যাচ্ছে। বাগান থেকে মণপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা দরে পেয়ারা বিক্রি হলে কৃষক বাঁচবে কি করে। তবে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশী পরিমাণে পেয়াড়া উৎপাদন হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্রমিকের মজুরিই তো ৭০০-৮০০ টাকা।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ জানান, পেয়ারা উৎপাদনের সাথে ৪১ জন (উপাদান) জড়িত। জমি চাষ, চারা, শ্রমিক, সার, বিষ, কীটনাশক, দড়ি, বাঁশ, পলিথিন, জমির খাজনা ছাড়াও আরও কিছু উপাদান রয়েছে। এসব উপাদানের সাথে জড়িতরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। শ্রমিকের মজুরিসহ সকল উপকরণের দাম বেড়েছে। পেয়ারার ছাত্রাকনাশক ৬০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকা হয়েছে। বাগান থেকে ২৫ টাকা কেজিতে কৃষক পেয়ারা বিক্রি করতে পারলে লোকসান না হয়ে উৎপাদন খরচ ওঠবে। এর উপরে বিক্রি করলে লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার জানান, ঈশ্বরদীতে ৩৮০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ রয়েছে। আম-কাঁঠালের মৌসুমে প্রতিবছরই পেয়াড়ার দাম কমলেও এবারে অস্বাভাবিকভাবে দাম কমেছে।
(এসকেকে/এসপি/আগস্ট ০৩, ২০২৪)