‘কবে এই বাসগুলো ঠিক হবে, আমাদের তো না খেয়ে থাকতে হবে’
মাদারীপুর প্রতিনিধি : কেন এই বাসগুলো এভাবে পুড়ে দিলো। এগুলো কবে ঠিক হবে আর কবে আমরা কাজ করতে পারবো। এখন আমাদের তো না খেয়ে থাকতে হবে। আমাদের পরিবার নিয়ে কিভাবে এখন বাচবো। এভাবেই কথাগুলো বললেন সার্বিক পরিবহণের হেলপার মো. বজলু। শুধু তিনি নয়, একই ভাবে কষ্টের কথা জানান অনেকেই।
মাদারীপুরে নাশকতাকারীরা আগুন দিয়ে সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল পরিবহণের ৩২টি বাস পুড়িয়ে দেয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে পাচশতাধিক শ্রমিক। এই ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে ৩৫ কোটি টাকার।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ১৯ জুলাই মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগদী এলাকার সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সার্বিক বাস ডিপো ও সার্বিক ফিলিং স্টেশনে ভাংচুর ও আগুন দেন নাশকতাকারীরা। এসময় আগুনে মাদারীপুর-ঢাকা রুটের চলাচলকারী ৩২টি বিলাসবহুল বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় আরো ট্রাকসহ ৬টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। একইসময়ে পাশের সার্বিক ফিলিং স্টেশনেও ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এই নাশকতার ঘটনায় চালক, হেলপার, সুপারভাইজারসহ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত পাচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ঐসব শ্রমিকদের একমাত্র এই কাজের উৎস হারিয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমভাবে দিন যাপন করছেন। তারা এই পরিবহণগুলো ঠিক হবার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। ইতিমধ্যে বাসগুলো মেরামতের কাজ শুরু করলেও কবে শেষ হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে। এই ঘটনায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় সার্বিক ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শাহীন হাওলাদার বাদী হয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় ১৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনের নামে মামলা করেছেন।
হেলপার বজলুল শিকদার বাস ধরে কেদে কেদে বলেন, সার্বিক পরিবহণে আমি অনেক বছর ধরে হেলপারের কাজ করি। এই কাজের টাকা দিয়ে আমার সংসারের সব খরচ যোগাড় করতে হয়। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ, কিস্তির টাকা এখন কিভাবে যোগাড় হবে।
ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৯ জুলাই বিকেলে নাশকতাকারীরা হেলমেন্ট পড়ে হামলা চালায়। হঠাৎ করে এই হামলা চালায় তারা। তাদের হাতে পেট্রাল বোমা ছিলো, অস্ত্র ছিলো। তারা পেট্রাল পাম্পসহ ৩২টি বাস আগুন দিয়ে পুড়ি দেয়। এতে করে আমরা পাচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করতে না পারায় অসহায় করে পড়েছি। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই। যাতে করে আমরা দ্রুত কাজগুলো ফিরে পেয়ে বাচতে পারি। সেই সাথে অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানাই।
হেলপার ইয়াসিন হাওলাদার, বাবু, মাসুদ, সুপারভাইজার মোশারফ শরীফ, কামাল, আনোয়ার হাওলাদার, আসাদ, মিরাজ, ইকবাল ও ড্রাইভার সিদ্দিক হাওলাদার, মোশারফসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, একসাথে এতগুলো বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। অনেকের ঘরে খাবার নেই। খুব কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এই বাসগুলো কবে ঠিক হবে জানিনা। এগুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজও করতে পারবো না। এখন আমরা কি করবো, কিভাবে বাচবো।
সার্বিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ম্যানেজার গোপাল হালদার বলেন, মাদারীপুর-ঢাকা রুটের চলাচলকারী ৩২টি বিলাসবহুল বাসে নাশকতাকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে এই কাজের সাথে জড়িত পাচশতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তারা বর্তমানে অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন। তাই এই শ্রমিকগুলোর কথা চিন্তা করে আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। যাতে করে দ্রুত বাসগুলো মেরামত করে পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা হলে অসহায় শ্রমিকগুলো তাদের কাজ ফিরে পাবে।
সার্বিক ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শাহীন হাওলাদার বলেন, সার্বিক পরিবহণ ও সার্বিক ফিলিং স্টেশনে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই সরকারের সহযোগিতা না পেলে তেলের পাম্প পূর্ণাঙ্গ চালু ও সড়কে বাস চলাচল পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের খুজে বের করে শাস্তির দাবী জানাই।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে দেয়া ও তেলের পাম্প ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(এএসএ/এসপি/আগস্ট ০৩, ২০২৪)