উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : লে. হারুনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দল কুমিল্লার উত্তরে পাকবাহিনীর কালামছড়ি চা বাগান ঘাঁটি আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর গ্রেনেড বিস্ফোরণে পাকবাহিনীর ১০টি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং ৫০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। দুইজন পাকসৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয় এবং মেশিনগানসহ অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও ২০/২৫ হাজার গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। অপরদিকে মুক্তিবাহিনীর দুইজন বীর যোদ্ধা শহীদ হন।

মুক্তিবাহিনী ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকবাহিনীর ভুরুঙ্গামারী কলেজ অবস্থানের ওপর প্রচন্ড আঘাত হানে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। হানাদার সৈন্যরা তাদের অবস্থান ত্যাগ না করলেও বহু হতাহত হয়। এই প্রচন্ড যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধা আনসার আলী শহীদ হন এবং কয়েকজন আহত হয়।

কমিল্লা জেলার হরিশ্বরদার হাটির কাছে মুক্তিবাহিনীর এ্যামবুশ দল পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। পাকসেনারা মর্টার ও কামানের সাহায্যে পাল্টা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। সমস্ত দিনের যুদ্ধে ২৫ জন পাকসেনা হতাহত হয়।

বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার এ্যালেক ডগলাস হিউম বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা পাকিস্তান সরকারকেই নিতে হবে। আমরা যতো শিগ্গির সম্ভব একটি সমাধান দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। কেননা, সেখানকার জনগণের অনবরত দেশত্যাগ আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তেহরানে দৈনিক কায়হান ইন্টারন্যাশনালের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, সমগ্র দেশের প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় পরিষদ কর্তৃক গঠিত বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার আগে কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের কাছে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না।

টনি ক্লিফটন ‘উিজ ইউক’ পত্রিকায় লেখেন, ‘একজন মাত্র লোকই আছেন পৃথিবীতে যিনি পাকিস্তানকে এখনও রক্ষা করতে পারেন। তিনি হচ্ছেন মুজিব। ইয়াহিয়া বলছেন মুজিবকে মরতেই হবে। কিন্তু যেদিন তার ফাঁসি হবে, সেই একই ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলবে পাকিস্তান।’

‘টাইম’ ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘নদী পেরিয়ে, মহাসড়ক ধরে, অসংখ্য বনবাদাড় মাড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তানে অসংখ্য লোক ভারতে এসে ঢুকেছে। সে এক বিপুল জনস্রোত। কার্ডবোর্ডেও বাক্স, টিনের কেটলি হাতে, ছেড়া কাপড়ে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাঙালী উদ্বাস্তু। কেউ বইছে রোগা শিশুদের, কেউ বা দুর্বল বৃদ্ধদের। নগ্ন পা তাদের ক্ষয়ে গেছে কাদায়। বাচ্চাদের বিচ্ছিন্ন কান্না ছাড়া তারা নিস্তব্ধ। কিন্তু তাদের চেহারাই বর্ণনা করছে ঘটনা। বেশীর ভাগই তারা অসুস্থ। কাঁথায় ঢাকা। অনেকে কলেরায় আক্রান্ত। পথে মারা গেলে বইবার কেউ নেই। হিন্দুরা, যখন পারছে, মরার মুখে গুজে দিচ্ছে জ্বলন্ত কয়লা, নয় দাহ করিয়ে দিচ্ছে কোন মতে। বাকি টুকু সারছে শেয়াল,কুকুর আর কাক। মৃতদেহগুলো টপকে আসার সময় শরণার্থীরা নাকে কাপড় গুজে দিচ্ছে।’

‘টাইম’-এর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘মুক্তিবাহিনীর অর্ধেক, প্রায় ৫০,০০০সৈনিক, এসেছে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বাঙালী পুলিশদের ভেতর থেকে। এছাড়া রয়েছে যুবক গেরিলা যোদ্ধারা যাদের অধিকাংশই ছাত্র। গেরিলারা ঢাকায় দু‘বার আক্রমণ পরিচালনা করেছে। কয়েক সপ্তাহ তারা অচল করে রেখেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেখানেই পারে তারা তুলে দেয় লাল, সবুজ আর হলুদে রঞ্জিত বাংলাদেশের পতাকা।

রাজশাহীতে রাজাকার বাহিনীর প্রথম ব্যাচের সশস্ত্র ট্রেনিং সমাপ্তি উপলক্ষে স্থানীয় জিন্নাত ইসলামিক ইনস্টিটিউট হলে মিয়া মোহাম্মদ কাসেমীর পরিচালনায় সমাপনী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে রাজাকারদের পবিত্র কোরআন স্পর্শ করিয়ে শপথ করানো হয়।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

(ওএস/এএস/আগস্ট ০২, ২০২৪)