‘আমার ছেলে হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রাখলাম’
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় উপজেলার দামগাঁও গ্রামের নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব (১৯)। এসময় সে অন্তসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে কলতাপাড়া গিয়েছিলো।
নিহত রাকিবের মা নূরুন্নাহার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার ছেলে কোন রাজনীতি করতো না, কোন আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত ছিলো না; তাহলে কেন গুলি করে মারা হলো? আমার ছেলে হত্যার বিচার আর কারও কাছে চাই না, আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম।’
তিনি বিলাপ করে আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার আমার এক আত্মীয়ের বিয়ে ছিল। সেখানে যাওয়ার সময় আমার ছেলে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে যায়। বিকালে ছেলে ফোন করে বলে মা তাড়াতাড়ি চলে এসো। শনিবার বাড়ি ফিরেই ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পাই। স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ কোরআনের পাখি হবে। কিন্ত সেটা আর হলো না।’
নিহত রাকিব উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের আব্দুল হালিম শেখ ও নূরুন্নাহার বেগম দম্পত্তির একমাত্র পুত্রসন্তান। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাকিব তৃতীয়।
রোববার বিকেলে দামগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা আব্দুল হালিম শেখ পুত্রবধু অন্তঃসত্ত¡া সাদিয়াকে ডাক্তার দেখাতে ময়মনসিংহ নিয়ে গেছেন।
রাকিবের মৃত্যুর পর এখনো শোকে কাতর পুরো পরিবার। তারা দাবি করেন, ‘রাকিব কোন রাজনীতি করতো না। কোটা আন্দোলনেও সম্পৃকক্তা ছিল না। ঘটনার দিন অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রাকিব।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার এমদাদুল উলুম নূরানীয়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে ২০২২ সালে হেফজ সম্পন্ন করেন রাকিব। এরপর নিজ বাড়িতেই গড়ে তোলা ও বাবার পরিচালনায় তালিমুল কুরআন মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি ভর্তি হন ঈশ^রগঞ্জের ভাসা আতহারিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় কিতাব বিভাগে।
আট মাস আগে রাকিব বিয়ে করেন ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার সাদিয়া আক্তারকে। তার স্ত্রী বর্তমানে চারমাসের অন্তঃসত্ত¡া। স্বামী হারানোর শোকে সেও নির্বাক হয়ে গেছেন বলে জানান রাকিবের চাচাতো ভাই আব্দুল মালেক।
তিনি বলেন, ‘গত শনিবার সকালে সকালে সাদিয়া শারীরিক ভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এসময় রাকিব তার স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে কলতাপাড়া বাজারে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। শোনেছি সংঘর্ষের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করার সময়ই আমার ভাই গুলিবিদ্ধ হয় ।
রাকিবের ভগ্নিপতি ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, ‘রাকিবের মরদেহ বাড়িতে আনার পর দেখতে পাই বুকের বামপাশের গুলির ছিদ্র ছিল। রািকব ছিল শ^শুড়ের একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকে কাতর হয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনায় মামলা করবো না। মামলা করলেই কি আর রাকিব ফিরে আসবে?’
গত ২০ জুলাই কোটা আন্দোলনকে ঘিরে উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রাকিবসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন কলতাপাড়া বাজারে তাল্লু স্পিনিং মিলে হামলা করে পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় গৌরীপুর থানার ওসি সহ দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়।
(এসআইএম/এএস/জুলাই ৩০, ২০২৪)