এমপি বাদল বললেন, বাজারটিকে ধ্বংস করতেই একটি চক্র তৎপর
নবীনগরের বাঙ্গরা বাজারে সওজের আচমকা উচ্ছেদ অভিযানে সর্বশান্ত শতশত ব্যবসায়ী
বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পাক বাঙ্গরা বাজারে আজ দিনভর সওজের আচমকা এক উচ্ছেদ অভিযানের ফলে সর্বস্ব হারিয়ে বাজারের শত শত ব্যবসায়ী এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোন ধরণের নোটিশ ছাড়াই আচমকা এ ভয়াবহ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায়, উচ্ছেদ হওয়া বাজারের প্রায় আড়াইশ দোকানী তাদের দোকান থেকে কোন মালামালাই সরাতে পারেন নি। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সর্বশান্ত হওয়া ব্যবসায়ীরা দাবী করছেন।
তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তথা সওজের দাবী, বারবার নোটিশ দেওয়ার পরও সড়কের দুই পাশে থাকা সরকারি জায়গা থেকে দোকানগুলো না সরানোর কারণে যথাযথ নিয়ম মেনেই দুদকসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশে আজ আড়াইশ অবৈধ দোকানপাঠ উচ্ছেদ করা হয়।
আজ সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে নবীনগর কোম্পানীগঞ্জ কুমিল্লা সড়কে অবস্থিত বাঙ্গরা বাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সওজের জেলা কর্মকর্তাবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রচুর সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে হাজারো উতসুক মানুষের সামনেই একাধিক বড় বড় ক্রেন দিয়ে সড়কের দুই পাশে থাকা প্রায় আড়াইশ পাকা অর্ধপাকা দোকানপাঠ উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এসময় বাজারের আশেপাশেও চরম আতংক ছড়িয়ে পড়ে। উচ্ছেদ চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টা নাগাদ সড়কের দুই পাশে থাকা সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা আড়াইশ দোকান পুরোপুরি গুড়িয়ে দেয়া হয়।
এসময় সওজের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, নবীনগরের ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম, নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সজল কান্তি দাশসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা প্রচুর সংখ্যক পুলিশ নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানটি মনিটরিং করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন,'স্বাধীনতার পর ঐতিহ্যবাহী এই বিশাল পাক বাঙ্গরা বাজারটিতে সওজের জায়গায় গড়ে ওঠা শত শত দোকানপাঠ বহুবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই উচ্ছেদের কিছুদিন পরই আবার একটি স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সওজের জায়গায় নবীনগর কোম্পানীগঞ্জ সড়কের দুই পাশে বাঙ্গরা বাজারে শত শত দোকানপাঠ পুনরায় তুলে দেয়। কয়েকমাস পর সওজ এসে আবারও সেইসব দোকানপাঠ উচ্ছেদ করে। এভাবে গত ৫৩ বছরে বহুবার এই বাজারে দোকান উঠানো এবং উচ্ছেদ করার এই ভানুমতির খেইল চলে আসছে।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, ‘এবারও কয়েকমাস আগে সর্বশেষ বাঙ্গরা বাজারে উচ্ছেদ অভিযানের পর পুনরায় ৩/৪ মাস আগে আবারও স্থানীয় একটি চিহ্নিত প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় প্রতিটি দোকান তৈরীতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে রাস্তার দুই পাশে একদম পাকা পিলারসহ মজবুত করে শত শত দোকানপাঠ নির্মাণ করে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আগের মতো সেইসব পাকা দোকানগুলো আজ আবারও পুরোপুরি গুড়িয়ে দিয়ে যায় সওজ কর্তৃপক্ষ।'
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজারের সভাপতি রবিউল আওয়াল রবি চেয়ারম্যান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'কোান ধরণের বলা নেই, কওয়া নেই, আচমকা ম্যালা পুলিশ ও বড় বড় ক্রেন নিয়ে আইসা রাস্তার দুই পাশের শত শত দোকান কয়েক ঘন্টার মথ্যে পুরোপুরি ভাইঙ্গা ফালাইল। কঠোর এই আচমকা উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে কোন দোকানী কারও দোকান থেকে এক টাকার মালামালাও সরাইতে পারে নাই। এই আচমকা অভিযানে ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হইয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা এখন সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে।'
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'একবার দুবার নয়, অসংখ্যবার বড় এই বাজারে রাস্তার দুই পাশের সরকারি জায়গা থেকে আড়াইশ দোকানদারকে নোটিশ দেয়া হয়েছে, একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। ফলে উর্ধতন কর্মকর্তাতের কঠোর নির্তেশে যথাযথ নিয়ম মেনেই আজ উচ্ছেদ অভিযান করা হয়।'
এ বিষয়ে নবীনগর থেকে নির্বাচিত দুইবারের স্থানীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল বলেন, ‘সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চলবে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকার ঐতিহ্যবাহী এই বাঙ্গরা বাজারটিকেই কেন বারবার টার্গেট করা হচ্ছে? নবীনগর কোম্পানীগঞ্জ কুমিল্লা সড়কের দুই পাশে তো আরও বড় বড় বাজার অবৈধভাবে সওজের জায়গায় গড়ে উঠেছে। কই, সেই বাজারগুলোতে কোন উচ্ছেদ অভিযান হতেতো দেখছি না! এতে করে বাঙ্গরাতে বারবার চলা এসব উচ্ছেদ অভিযানগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে!'
সাংসদ ফয়জুর রহমান অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'বাঙ্গরা বাজার থেকে মাত্র ১০০ ফুট দূরে থাকা নবীনগর কোম্পানীগঞ্জ সড়কে থাকা পাশ্ববর্তী গাজিরহাট বাজারটিওতো অনেকটা সওজের জায়গাতে গড়ে উঠেছে। কই, সেখানেতো সওজকে এখন পর্যন্ত এক চুলও উচ্ছেদ করতে দেখলাম না। তার মানে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গরা বাজারটিকে ধ্বংস করাই কি তাহলে একটি চক্রের মূল উদ্যেশ্য?’
(জিডি/এসপি/জুলাই ১৫, ২০২৪)