মেধাবী শিশু মরিয়মের ভিক্ষাবৃত্তির টাকায় চলে সংসার
প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম : মোঃ গোলাম রসুল (১১) নামের দুই হাতবিহীন একটি প্রতিবন্ধী শিশু তার ৮বছরের বোন মরিয়ম খাতুনকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে ভিক্ষা করতে। অথচ তারা দু’জনেই লেখাপড়া করেন স্থানীয় একটি প্রাইমারী স্কুলে। দু’জনেই মেধাবী। ফুটফুটে সুন্দর দুই ভাই বোন তাদের সংসার ও পড়াশোনা চালায় একমাত্র উর্পাজন করা ভিক্ষা করা টাকা দিয়ে। কি করুন ইতিহাস তাদের জীবনে। যে বয়সে পুতুল খেলার সময়, সেই বয়সে তার বাবা ভিক্ষার বোঁঝা কাঁধে তুলে দিয়েছে।
অথচ বাবা-মা দুজনেই কর্মঠ। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টায় রাজারহাট বাজারের অলিতে গলিতে ব্যবসায়ীদের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে ৮বছরের শিশু মরিয়ম ভিক্ষা করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে তার ভাই দুই হাতবিহীন প্রতিবন্ধী গোলাম রসুল। ভিক্ষা করতে আসা শিশু মরিয়ম ও গোলাম রসুলকে ডাক দিলেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে আসেন।
বাড়ির কথা বলতেই মরিয়ম খাতুন কাঁদে কাঁদো হয়ে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের মিয়াজী পাড়া গ্রামে। তার বারা জাহেদুল ইসলাম একজন দিনমজুর, মা রূপালী বেগম একজন গৃহিনী।
প্রতিদিন সকালে কোন রকমে চাল ভাজা (নাস্তা) খেয়ে মা রূপালী তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করতে বেরিয়ে যায়। মা এক জায়গায় বসে থাকেন। আর প্রতিবন্ধীসহ দুই শিশু ভিক্ষা করতে সবার দ্বারে দ্বারে ঘোরেন। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরেন। ৮বছরের শিশু মরিয়ম খাতুন বলেন, আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমার রোল ৩ । দুই হাত বিহীন গোলাম রসুল বলেন, আমি ক্লাব ফাইভে পড়ি, আমার রোল ২। ওই এলাকার প্রাইমারী স্কুলে লেখা পড়া করলেও তাদের স্কুলের পুরো নাম বলতে পারেনি তারা। তবে ওই স্কুলের শিক্ষক আতাউর ও আব্দুল খালেকের নাম জানিয়েছে শিশু দু’টি। তারা আরও জানায়, প্রতিদিন ভিক্ষা করে ৩’শ থেকে ৪’শত টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়ে গরিব বাবা-মায়ের সংসার চালিয়ে যা থাকে তা দিয়ে লেখা-পড়ার খরচ চালান তারা। শিশু দু’টির জাহেনুর ও জান্নাতি নামের আরও বড় দুই বোন রয়েছে। তাদের বিয়ে সাদি হওয়ায় তারা স্বামীর বাড়িতে ঘর সংসার করছেন বলে শিশু মরিয়ম জানান। ভিক্ষা করা ভাল না খারাপ বললে তারা বলেন, আমরা ভিক্ষা করতে চাই না। মা বাবা গরিব আমরা ভিক্ষা না করলে মা আমাদের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তার মায়ের সাথে দেখা করতে চাইলে তারা কেঁদে বলেন, দেখা করলে মা আমাদের আরও বেশী মারবেন। বিষয়টি টের পাওয়ায় তার মা রূপালী সেই জায়গা থেকে সরে যান। রাজারহাট বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার বাবা মা এ পেশায় তাদেরকে নিয়োজিত করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজারহাট সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা বা শ্রম দেয়া অপরাধ। এ বয়সে তাদের অবশ্যই স্কুলে পাঠাতে হবে। লেখা-পড়ার সব খরচ সরকার বহন করে। শিশু দু’টি অবশ্যই মেধাবী। তাদের নার্সিং করলে ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কারিগর হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
(পিএমএস/এএস/জুলাই ০৬, ২০২৪)