উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : সারাদেশে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুরেও এই সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো জেলা জুড়ে। এতে করে বিভ্রান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। চাঁদপুর সদর ও বিভিন্ন উপজেলা সহ শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম অঞ্চল এবং শরীয়তপুর লাগোয়া মেঘনা নদীর চর এলাকা এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম  বিষাক্ত সাপ রাসেলস ভাইপার।

প্রায় এক-দেড় দুই আগে চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকা শরিয়তপুর এবং মতলব উত্তর ও চাঁদপুর সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও রাজরাজ্বেশর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষি জমিতে প্রথমে কয়েকটি রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিললেও বর্তমানে নদীর পাড় এলাকার অনেকস্থানেই এই সাপের দেখা মিলছে বলে গত এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই সাপ নিয়ে একাধিক পোস্ট ভাইরাল হওয়ায় জনসাধারণের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

গত ২২ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন এক ব্যক্তি তার ফেসবুক পেজে “চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডীতে রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে সদর হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পোস্ট করেছেন। তবে বাস্তবে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়না। যার কারণে আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চাঁদপুর জেলাবাসী।

এছাড়া ফেসবুকে আরো একাধিক ব্যক্তি লিখেছেন বিষাক্ত এই রাসেলস ভাইপার সাপে কাটলে নিশ্চিত মৃত্যু বা কোনো প্রকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে নেই। এমন কিছু পোস্টের কারনেই অনেক সাধারণ মানুষ বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে , অন্যান্য বিষাক্ত খোকড়া সাপ এবং ফানক সাপ কাটলে মানুষকে বিষ প্রতিষেধক যে এন্টিভেনম ভ্যাকসিন দেয়া হয়। রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপে কাটলেও একই ভ্যাকসিন দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শাখাওয়াত হোসেন জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রায় ১০০ বেশি এ্যান্টিভেনম স্টকে রয়েছে। এর মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০টি মতলব দক্ষিন স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি। এমনি ভাবে বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে প্রায় শতাধিকেরও বেশি এ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন মজুদ রাখা হয়েছে।

রাসেলস ভাইপার সাপের কামড় এবং ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান জানান, যে কোনো বিষাক্ত সাপে কাটলে বিষ প্রতিষেধকের একই এ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন দেয়া হয়। আমাদের হাসপাতালে ১৩০টি এ্যান্টিভেনম মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি আরো ২০০ চাহিদার কথা সাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে জানানো হয়েছে। আগামী বুধবার সে চাহিদার ২০০ ভ্যাকসিন আনতে হাসপাতাল থেকে লোক পাঠানো হবে।

একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, যেকোনো বিষধর সাপে কাটলে কোনো ওঝাঁর কাছে গিয়ে সময় নষ্ট না করে যতটা দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমরা তার সিমটম দেখে, সে অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করবো।

এদিকে, বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাসেলস ভাইপার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইঁদুর শিকার রাসেলস ভাইপার প্রায়শই মানুষের বসতির কাছাকাছি এবং বিশেষ করে ফসল কাটার সময় কৃষি জমিতে চলে আসছে। ২০২৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়।

রাসেলস ভাইপর এদেশের মানুষের কাছে চন্দ্রবোড়া সাপ হিসাবেই বেশি পরিচিত। এ সময়ের বিলুপ্ত প্রায় এই বিষধর সাপটিই এখন সারাদেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এরিই মধ্যে, দেশের প্রায় ২৮টি জেলাতে এই রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত এই সাপের কামড়ে ১০ জন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তবে এই বিষধর সাপে কামড়ের সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে।

(ইউএইচ/এসপি/জুন ২৪ ২০২৪)