রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর থেকে : জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই -এর তথ্যের ভিত্তিতে ও ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের দিক নির্দেশনায়, ফরিদপুরের সদরপুর বাজারের অবস্থিত সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে চুরি করে বিক্রিত চাল পাচার হওয়ার সময়, ঢাকা খুলনা মহাসড়কের আবুল হোসেন ব্রিকসের সামনে থেকে ফরিদপুরের জেলা পুলিশের একটি অভিযানিক দল ওই ট্রাকটি আটক করে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ফরিদপুর জেলা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় ফরিদপুর জেলা এনএসআই-এর একাধিক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

আটক করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সদরপুর খাদ্য গুদামের ২০ মেট্রিক টন (৬৬৪ বস্তা) চাল বোঝাই একটি ট্রাককে আটক করে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এসময় আটক করা হয়েছে ওই ট্রাকের হেলপার- ফরিদপুর কোতয়ালি থানার গেরদা ইউনিয়নের পসরা গ্রামের সাদেক চোকদারের ছেলে সুমন চোকদার (৪০) ও ড্রাইভার কোতয়ালি থানার বাখুন্ডা গ্রামের জালাল শেখের ছেলে মো. জাফর শেখ (৫০)কে।

ঘটনাস্থলেই গ্রেফতারকৃতরা সদরপুর সরকারি খাদ্য গুদামের চাউল বলে স্বীকার করে বলেছেন, 'এই চাল আমাদের নয়, আমরা খাদ্য গুদাম থেকে গাড়ি লোড করে মাগুড়া নিয়ে যাচ্ছি, মাগুরা নিয়ে আমাদের ফোন দেয়ার কথা। এর কোন প্রকার কাগজপত্রও আমাদের কাছে নেই'।

তারা আরও জানান, 'এই চাল ফরিদপুর হাজী শরীয়ত উল্লাহ মার্কেটের জৈনক ব্যবসায়ী হালিম হাওলাদারের। তিনি কিনেছেন জৈনক জয়নালের কাজ থেকে। হালিম হাওলাদের নির্দেশেই এগুলো মাগুরা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মাগুরা পৌঁছে আমাদের ফোন দেওয়ার কথা। তখন তিনি বলে দিবেন এসব কোথায় পৌঁছাতে হবে।

সরকারি গুদামের চাল এভাবে গোডাউন থেকে চুরি করে বিক্রির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর জেলা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই-এর এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ধারণা করছি কোন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি হয়তো এসব চাউল চুরি করে বিক্রি করে থাকতে পারেন। তিনি আরও জানান, সম্ভবত এটি কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা) বা টিআর এর কোন চাউল হবে।’

এই বিষয়ে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আমি চালের ট্রাক আটকের ঘটনা শুনেছি। আমার থানার পুলিশ ওই ট্রাক ধরেনি, তবে আমি শুনেছি ফরিদপুর জেলা পুলিশের হাইওয়ে পুলিশ ট্রাকটি ধরেছেন'। আর যেহেতু এটি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সরকারি গুদামের চাউল, ট্রাকটি সদরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। ওইখানে যাচাই-বাছাই এর কাজ শেষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে!’

এদিকে এনএসআই বলছে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার এএসআই মহিউদ্দিন নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

অপরদিকে, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘এটা তো ফরিদপুরের ঘটনা, কোতয়ালি থানা ধরেছেন কিনা খোঁজ নিন। আমি শুনেছি এমন একটি ট্রাক আটক করা হয়েছে।’

ঘটনাস্থলে এই প্রতিবেদক উপস্থিত ছিলেন জানালে ওসি শফিকুল জানান, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাকটি সদরপুরে এসে পৌঁছাবে। আসার পর এসব চাউল সরকারি গুদামের কিনা, তা যাচাই বাছাই করা হবে।’ এসব সামগ্রিক বিষয় যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত পরে জানাবেন বলেও জানান ওসি শফিকুল।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আটককৃত ট্রাকটি সদরপুর থানায় জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই অভিযানে থাকা ফরিদপুর জেলা এনএসআই-এর এক কর্মকর্তা।

(আরআর/এসপি/জুন ১১, ২০২৪)