রিয়াজুল করিম, রাজবাড়ী : সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার বাগদী সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক হত দরিদ্রের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিমল তাঁতি ও খোকন কর্মকার নামের দুই টাউট। তারা নিজেদেরকে রাজবাড়ী আদিবাসী কল্যাণ সমিতির সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে টাকা নেন।

প্রতারক বিমল তাঁতি রাজবাড়ী সদর উপজেলার চরনারায়নপুর গ্রামের দিজেন তাঁতির ছেলে। এবং খোকন কর্মকার একই উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের কানু কর্মকারের ছেলে।

এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায়, প্রতারক বিমল তাঁতী ও খোকনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অন্তত ডজন খানেক ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। সেই সাথে, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রাজবাড়ীর প্রেস ক্লাব বরাবর অনুলিপিও দিয়েছেন প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগী রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া গ্রামের প্রভাতি(৬৫) বলেন; আমি রাজবাড়ী আদিবাসী কল্যান সমিতির একজন সদস্য। বিমল তাঁতি আমাকে জানায় যে, আদীবাসীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দ কৃত ঘর এবং সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলিয়া আমার নিকট হইতে অফিস খরচ বাবদ বিগত ২ বছর পূর্বে নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অফিসে যাওয়ার কথা বলে এবং ঘর এবং সেলাই না দিয়া অযথা ঘুরাতে থাকে। আমি নিরুপায় হইয়া একদিন ঘর ও সেলাই মেশিন চাইলে অন্যথায় আমার পাওনাকৃত টাকা ফেরত চাইলে প্রতার বিমল তাঁতি আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো অথবা খুন জখম করিবে হুমকি প্রদান করে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি ৩ জুলাই ২০২২ তারিখে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। থানা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানাতে এসেছি।

এ ব্যাপারে একই উপজেলার বাসুদেব গ্রামের বিনয় চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খোকন কর্মকার নিজেকে রাজবাড়ী আদিবাসী কল্যাণ সমিতির সদস্যের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, আদিবাসীদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বরাদ্দকৃত ঘর এসেছে। টাকার বিনিময়ে সরকারি এসব ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে গত ২ বছর পূর্বে খোকন কর্মকারের হাতে আমি নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেই। এখন ঘরে দেয় না আবার টাকা ফেরত চাইলেও দেয় না, টাকা ফেরত চাইলে গালিগালাজ করে এবং উল্টো মামলা ও মারধর করার হুমকি-ধামকি দেয়। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানাতে এসেছি।

এমন আরো একাধিক লোকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কথা হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে হলেন; রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ লক্ষীকোল গ্রামের মৃত কেষ্ট বাগদীর ছেলে সুশীল বাগদী, বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত সুবল সরকারের ছেলে আনন্দ সরকার, রাজবাড়ী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডস্থ মাধব লক্ষীকোল গ্রামের মৃত হরেন বাগদীর ছেলে দুলাল বাগদি, একই এলাকার মৃত ফটিক বাগদীর ছেলে তারাপদ বাগদী, মৃত সুনীল বাগদির স্ত্রী মেনুকা বাগদী, ভাবদিয়া গ্রামের মৃত ভুবন বিশ্বাসের ছেলে পরিমল বিশ্বাস, মাধব লক্ষ্মীকোল গ্রামের মৃত গতি লাল বাগদির ছেলে আনন্দ বাগদী, পাঁচুরিয়ার গুপ্ত মানিক গ্রামের মৃত রামা বাগদীরর মেয়ে লক্ষ্মী রানী প্রমূখ।

এ প্রতারণার ঘটনায়, বিমল তাঁতি ও খোকন কর্মকারের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এসপি/জুন ০৯, ২০২৪)