ইমা এলিস, নিউ ইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন ওলরাউন্ডারখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। নিউ ইয়র্কে এসে বিভিন্ন পার্টি ও সমাবেশের নামে তহবিল সংগ্রহের নামে চাঁদাবাজি করলেও এবারের কৌশলে একেবারে ভিন্ন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো ও ভিত্তি প্রস্তরহীন বাংলাদেশের মাগুরায় নিজের নামে ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন দেশে-বিদেশে। তার সেই ক্যান্সার হাসপাতালের নামকে সংশোধন করে শুধুমাত্র তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ইন্ক’ নামে একটি সংস্থা চালু করেছেন নিউ ইয়র্কে। সাকিবের ঠান্ডা মাথায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে নিউ ইয়র্কের প্রবাসীরা। তারা নিউ ইয়র্ক স্টেট এটর্নি জেনারেল অফিসে বিষয়টি অবহিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় অর্থে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে এসে টিমের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিউইয়র্কস্থ সেকেন্ড হোমে নিয়মিত আয়োজন চলছে পার্টি আর পিকনিকের। অপরদিকে নিউ ইয়র্কের সেন্ট জোনস ইউনিভার্সিটির বলরুমে আগামী ৮ জুন সন্ধায় ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ইন্ক’র ব্যানারে আয়োজন করেছেন তহবিল সংগ্রহ ডিনারের। সাকিব আল হাসান ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ইন্ক নামের কোম্পানীটি সম্পূর্ন নতুন। নিউ ইয়র্ক স্টেটে অলাভজনক কোম্পানী হিসেবে সার্টিফিকেশনের জন্য গত ৭ মে তিনি তড়িঘড়ি করে আবেদন করেন। পরদিন ৮ মে কোম্পানীটি নথিভূক্ত করা হয়েছে বলে স্টেটের ওয়েব সাইট সূত্রে জানা গেছে। নিউ ইয়র্ক স্টেটভূক্ত তার কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৭৩২৪৭৬৭। তবে কোম্পানীটিকে করমুক্ত সুবিধা পেতে হলে কম করে হলেও আরো ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে প্রস্তুতি চলছে তহবিল সংগ্রহ ডিনারের। পরিচিতজনদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে দাওয়াতপত্র। যাতে উল্লেখিত কোম্পানির পরিবর্তে লেখা আছে বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কথা। দাওয়াত পত্রে কোথাও কারো নাম ঠিকানা বা ফোন নাম্বার উল্লেখ করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় অর্থে ক্রিকেট খেলতে এসে সাকিব আল হাসান ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানাদিতে জড়িয়ে পড়ে জন্ম দিয়েছেন নতুন বিতর্কের। হাজারো বিতর্কের বরপুত্র সাকিব আল হাসানের অর্থ সংগ্রহের আয়োজন নানাবিধ প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মনে।

নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চলতি সপ্তাহে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ওয়েব সাইট রয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার হাসপাতাল প্রকল্পের নূন্যতম কোন তথ্য নেই তাতে। আছে শুধু অনুদানের আহ্বান। সাকিব আল হাসান মাগুরায় হাসপাতালের কোন ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেননি এখনো। প্রাথমিকভাবে পাঁচ দশ কোটি টাকা তাতে লগ্নি করেছেন এমন কোন তথ্যও নেই।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রশ্ন আন্তরিক হলে সাকিব এককভাবে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রতিষ্ঠা করতে পারেন এধরণের একটি হাসপাতাল। সেখানে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন বা কোন পরিকল্পনা ছাড়াই কিভাবে তিনি নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তহবিল সংগ্রহ করতে চান? সরল মনে অনেকে বিষয়টি বিশ্বাস করলেও সচেতন প্রবাসীরা তহবিল সংগ্রহের আয়োজনকে দেখছেন ভিন্ন চোখে। তারা মনে করেন ক্যান্সার হাসপাতালের নামে সাকিব আসলে চাঁদাবাজিতে নেমেছেন।

এসবের আড়ালে তিনি এঁটেছেন ভিন্ন ফন্দি। অর্থ পাচার, শেয়ার বাজার কেলেকাংকারী, অন্যের জমি দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঘটনের নায়ক সাকিব কৌশলে প্রবাসীদের অর্থ হাতিয়ে নিতে চান বলে তাদের অভিযোগ। বিষয়টি তারা নিউ ইয়র্ক স্টেট এটর্নি জেনারেল অফিসকে অবহিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যে সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন ইউকে নামে একটি চ্যারিটি কমিশন নিবন্ধন করা হয়েছে ২০২৩ এর ২২ ডিসেম্বর। চ্যারিটি নাম্বার ১২০৬৩৩৪। কিন্তু এই তহবিলে কেউ অনুদান দিয়েছে এমনটি উল্লেখ নেই।

গত বছর ২৪ মার্চ সাকিব নিজের ৩৬তম জন্মদিনে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন 'সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠার। যার ব্যানারে নিজের নামে মাগুরায় একটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তুলতে চান তিনি। সাকিব মূলতঃ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব সেরা ক্রিকেটার ইমরান খানকেই অনুসরণের চেষ্টা করছেন। ইমরান লাহোর ও পেশোওয়ারে ক্যান্সার হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সাকিবও হাঁটতে চান ইমরান খানের দেখানো পথে। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় হোম ওয়ার্ক ও নিয়মনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই তার।

উল্লেখ্য, ইমরান খান ক্যান্সারে মৃত্যুবরণকারী তার মাতা শওকত খানমের নামে লাহোরে একটি মেমোরিয়াল ক্যান্সার হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৪ সালে। এর আগে তিনি পাকিস্তানের ১৮৬০ এর চ্যারিটি সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্টের ২১ ধারায় নিবন্ধিত করেন প্রতিষ্ঠানটি। পুরো হাসপাতাল নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এবং একই রাজ্যের বড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে রোগীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় হাসপাতালটি। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ইমরান খান ক্যান্সার আপিল ইনক’ নামে যুক্তরাষ্ট্রে আইআরএস এর করমুক্ত পাবলিক চ্যারিটি সেকশন ৫০১(সি) (৩) অনুমতিপ্রাপ্ত হয়। ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি বর্তমানে পেশোয়ার সহ ৫০টি শহরে নিয়োজিত ক্যান্সার রোগীদের সেবায়।

কিন্তু সাকিব আল হাসানের কল্পিত ক্যান্সার হাসপাতাল বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক নিবন্ধন প্রাপ্ত হয়েছে এমন কোন তথ্য প্রমাণ নেই তার ওয়েব সাইটে। মাগুরায় স্থাপিত হয়নি কোন ভিত্তি প্রস্তর বা অব কাঠামো। তার আগেই সাকিব যুক্তরাষ্ট্রে এসে কথিত হাসপাতালের জন্য আয়োজন করেছেন অর্থ সংগ্রহের। বাংলাদেশের একজন আইন প্রণেতা সাকিব আল হাসান বিয়ে করেছেন বাংলাদেশী আমেরিকান উম্মে আহমেদ শিশিরকে। তিনি আমেরিকার গ্রীনকার্ড পেয়েছেন ২০১৯ সালে। সাকিব গত ২০২৩ সালে নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডস্থ জেরিকো শহরে পাড়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন একটি বিলাস বহুল বাড়ি। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান এখানে বসবাস করছেন। অতীতে নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও ভক্তদের সাথে ফটোসেশন করে অর্থ কামিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ব ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান ক্রিকেটার হিসেবে দেশের জন্য যেমন সুনাম কুড়িয়েছেন তেমনি নিজে বনেছেন শত সহস্র কোটি টাকার মালিক। তার ঘোষিত অর্থের পরিমান নাকি আট শতাধিক কোটি টাকা। রাষ্ট্র তাকে পারিশ্রমিক এবং উপঢৌকন হিসেবে দিয়েছে স্থাবর-অস্থাবর অঢেল সম্পদ। এর বাইরেও তিনি কামিয়েছেন দু’হাতে। অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার প্রতি সীমাহীন লোভ সাকিবের। এক্ষেত্রে নেই কোন বাছ বিচার। সরকার দলীয় অন্যান্য সংসদ সদস্যদের সাথে চারিত্রিক বৈশিষ্টে তার কোন অমিল নেই। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পুর্বে কিংস পার্টিতে যোগদান করে রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। জাতীয় ক্রিকেট টিমে থেকে দলীয় রাজনীতিতে জড়ানোর ঘটনা ছিলো হটকারী ও নজিরবিহিন। জানা গেছে নানা কারণে তার উপর বিলা প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রতিকালে সাক্ষাত বঞ্চিত তিনি।

সাকিবকে নিয়ে এমনো আলোচনা চাউর আছে যে ‘যেখানে টাকা সেখানেই সাকিব’। জুয়া-মদ থেকে শুরু করে নিম্নমানের কাপড়, কসমেটিক্সের দোকান তিনি উদ্বোধন করেন টাকার বিনিময়ে। ক্যারিয়ারে নানা সময়ে তিনি জন্ম দিয়েছেন নানা বিতর্কের । কখনও সতীর্থদের সঙ্গে বাজে আচরণ করে, কখনো দর্শক-মিডিয়া কিংবা বোর্ডের নিয়ম ভঙ্গ করে। গত ঈদুল ফিতরে নিউইয়র্কে ঈদ জামাতে প্রবাসী কয়েকজন ক্রিকেট প্রেমী তার সাথে ছবি তুলতে চাইলে সাকিব তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং এক পর্যায়ে ঈদগাহ ত্যাগ করেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাকিব।

সাকিব জুয়া-মদ থেকে শুরু করে নিম্নমানের কাপড়, কসমেটিক্সের দোকান তিনি উদ্বোধন করেন টাকার বিনিময়ে। ক্যারিয়ারে নানা সময়ে তিনি জন্ম দিয়েছেন নানা বিতর্কের। সাকিব কখনো সমর্থকের ওপর চড়াও হয়ে, আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে, কখনো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কখনো জুয়ায় জড়িয়ে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ বিতর্কে জড়িয়েছেন পরিবারকে। কয়েক দিন আগে ভারতীয় অ্যাপ মহাদেব বেটিং অ্যাপকাণ্ডের তদন্তে সাকিবের বোন জান্নাতুল ফেরদৌস রিতু প্রকাশ্যে আসে। তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশে ‘ইলেভেন উইকেট ডট কম’ নামে একটি অ্যাপে ‘বেটিং কাণ্ড’ জুয়ার অংশীদার সাকিবের বোন। মানে তার বোন জুয়ার ব্যবসা করে!

সাকিবের প্রতারণা ও অনৈতিক ব্যবসা কেলেঙ্কারির তালিকা দীর্ঘ। স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার পলাতক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু ও আলোচিত সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে জড়িয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কৃষকদের প্রায় ৩০ একর জমি জবরদখল করে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ এলাকায় ‘নর্থস চিকস রংপুর লিমিটেড’ নামে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। আর জমি দখল ও পাহারা দিতে ব্যবহার করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। জমি দখলে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক কৃষক গুলিবিদ্ধসহ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন তখন।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রভাবশালী মিঠুর সঙ্গে বেনজীর আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান যুক্ত হওয়ায় তারা দুর্ভোগ পোহালেও ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ২০২২ সালে চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির ঘটনায় বিএসইসির তদন্তে সাকিব আল হাসানের নাম আসে। এক জুয়াড়ির দেওয়া প্রলোভনের বিষয়টি গোপন করায় ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। ২০২২ সালের আগস্টে জোয়ার সাইট বেটউইনারের একটি সহযোগী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান। নানা ক্ষেত্রে বিতর্কিত হওয়ায় সাকিবকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে বাদ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বেটিং সাইটের সঙ্গে জড়িয়ে বেশ কয়েকবারই বিতর্কের মুখে পড়া সাকিব আল হাসানের পর তার বোনের নামও উঠে আসে।

সাকিব আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এক প্রতিমন্ত্রীর পুত্র ও আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমানের (রংপুর- ৫ আসনের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে নৌকা প্রার্থী ছিলেন) ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অফিস খোলেন। রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ ও বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেক রহমান সাকিব আল হাসানকে রংপুরের ওই অফিসে নেন একাধিকবার। অনুমতি না নিয়েই মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিতে অবৈধভাবে শুরু করেন কমোডিটি ব্যবসা। রংপুর শহরের অফিসে সাকিবের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড বুরাক কমোডিটি থেকে সোনা কিনে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাশেক রহমান সাকিবকে অংশীদার বানিয়ে স্বর্ণ ব্যবসা করেন। কমোডিটিজ কোম্পানি খুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি না নিয়েই পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে করেন ব্যবসা।

মাঠে যত অপকর্ম

সাকিবকে নিয়ে খেলার মাঠেও কম বিতর্ক হয়নি। ভক্তের মোবাইল ফোন ছুড়ে ফেলা থেকে জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগ আম্পায়ার ও সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তর্ক-কিতর্ক। খেলায় ‘নিষেধাজ্ঞা’ ও মাঠের নৈপুণ্যের পাশাপাশি মাঠের বাইরের নানা কর্মকাণ্ড করে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্ভবত ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিতর্কে জড়ান সাকিব আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট করছিলেন তিনি। কিন্তু সাইড স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়া তার মনোযোগ বিঘ্ন ঘটালে হঠাৎ ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে যান সাকিব, ব্যাট উঁচিয়ে ওই দর্শককে হুমকি দেন। এক ভক্তের মোবাইল ফোন ছুড়ে ফেলে সমালোচিত হন সাকিব। কলকাতার কালীপূজায় উপস্থিত হওয়ার পর জড়ান আরেক বিতর্কে। মুসলমান হয়ে তিনি অংশ নেন পূজায়। সামাজিক মাধ্যমে সাকিবকে নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন অনেকেই। একপর্যায়ে ক্ষমা চেয়ে পার পান অলরাউন্ডার।

২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে এক দর্শক অটোগ্রাফ চাওয়ায় সাকিব তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনোক্ষুন্ন দর্শক কটুক্তি করেন। তখন গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শদের কলার চেপে ধরেন সাকিব। ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষের ম্যাচে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অফে ধরা পড়েন সাকিব। আউট নিয়ে ধারাভাষ্যকারের আলোচনার সময় প্যাভিলিয়নে বসা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন। ক্যামেরা দেখেই অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। এ ঘটনায় তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হন সাকিব। ২০১৪ সালে স্ত্রী শিশিরকে উত্যক্ত করার অভিযোগে সাকিব এক দর্শককে পেটান। ভারতের বিপক্ষে ওয়ান্ডে সিরিজ চলাকালে ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি ছাড়া বিসিবির করিডোরে স্ত্রীর কাছে এসে এই কাণ্ড ঘটানোয় শাস্তিও পেতে হয় তাকে।

বিসিবির কাছ থেকে লিখিত অনুমতি না নিয়ে ২০১৪ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) খেলতে দেশ ছাড়েন সাকিব। এ নিয়ে কোচ তাকে প্রশ্ন করলে জাতীয় দল ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন সাকিব। পরে বোর্ডের নির্দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফিরে পুরো ঘটনার দায় দেন ওই সময়কার কোচ হাথুরুসিংহের এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। ২০১৫ সালের বিপিএলে সিলেট সুপার স্টারের বিপক্ষে ম্যাট কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন সাকিব। আম্পায়ার তানভীর আহমেদ তাতে সাড়া না দিলে তার সঙ্গে অসদাচারণ করায় সাকিবকে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৮ সালে আমেরিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন সাকিব আল হাসান এক ভক্তের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে ব্যাখ্যাও দেন তিনি।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ঘটনা ইস্যুতে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার সাকিব পড়েন চরম বিপাকে। নিজে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত না হলেও ভারতীয় এক জুয়াড়ির তরফে ফিক্সিংয়ের অফার পেয়ে সেটা বিসিবি কিংবা আইসিসির কাছে না জানানোর অপরাধে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ভোগ করতে হয়। এসব বিতর্ক ছাড়াও ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিরোধ, ফটোসেশনে অংশ না নেয়া এবং টেস্ট খেলতে না চাওয়া, বিসিবির সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করাসহ আরো অনেক বিতর্কই রয়েছে অলরাউন্ডার এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। খেলোয়াড়ি জীবনে সাকিবের বিতর্কের জন্ম দেয়ার শেষ নেই। একই সঙ্গে নানাজনকে নিয়ে কটূক্তি, অশোভন আচরণ, সময়মতো প্র্যাকটিসে না যাওয়া, বিশ্বকাপ খেলার সময় ফটো সেশনে উপস্থিত না হওয়া, খেলা অসমাপ্ত রেখে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে যাওয়া, খেলার মাঝপথে দেশে ফিরে আসা নানান বিতর্ক জন্ম দিয়েছেন তিনি।

সাকিব আল হাসান তার অর্জন দিয়ে হতে পারতেন এক রোল মডেল, কিন্তু নানা অঘটন ঘটিয়ে তিনি নিজেকে পরিণত করেছেন বিতর্কের বরপুত্রে। সাকিব তার মাথায় সম্মানের মুকূট ধারণ করলেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন সে মুকূটের সম্মান রাখতে। এ মুকূটের ওজনে তিনি ধরাকে করছেন সরা জ্ঞান। বিতর্ক এবং সাকিব আল হাসান সমার্থক। সাকিব আল হাসান একজন সেলিব্রেটি। সেলিব্রেটিদের আচার-আচরণে ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধ থাকতে হয় বিনয়ী। কিন্তু সাকিবের মধ্যে সেটা দেখা যায় না। ক্রিকেট খেলা ছাড়া সাকিবের জাতিকে কী আছে দেয়ার? ক্রিকেট খেলার বয়স আছে বলেই সাকিবকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। খেলায় না থাকলে পরিণত হবেন মূল্যহীনে। ক্রিকেট ভালো খেলেন সে জন্যই সাকিবের এত গুরুত্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা বলেছেন, ‘সাকিব সব পেয়েছেন, কিন্তু মানুষ হতে পারেননি’। জনগণের আকাঙ্খা, জনগণের ভোটের অধিকারের আন্দোলনকে পায়ে দলিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগদান করে এমপি নির্বাচিত হন।

এ ব্যাপারে সাকিব হাসানের মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাগোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ক্ষুদে বার্তায় জানতে চাওয়া হয়েছিল সাকিব আল হাসান ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ইন্ক নামের ব্যানারে ফান্ড রাইজিং ডিনারের আয়োজন করেছেন ৮ জুন। সংগৃহীত তহবিলে দেশে কীভাবে খরচ করেছেন বা করবেন। পুর্বে সংগৃহীত তহবিলে দেশে কীভাবে খরচ করেছেন এবং ৮ জুনের সংগৃহীত অর্থ কীভাবে খরচ করবেন। কিন্তু কোন মতামত জানাননি।

(আইএ/এসপি/জুন ০৭, ২০২৪)