আবু নাসের হুসাইন, সালথা : গত ১৪ বছর ধরে অর্ধেক শরীর প্যারালাইসিস হয়ে আছে ৬০ বছর বয়সি আব্দুল খালেকের। কারো সহযোগিতা ছাড়া এক পা হাঁটা-চলাও করতে পারেন তিনি। যেখানে থাকেন সেখানে শুয়ে-বসেই সময় কাটাতে হয় তাকে। একঝাঁক ভাই-বোন ও দুটি ছেলে সন্তান থাকলেও তার খবর নেননি কেউ। এরই মধ্যে বয়সের ভারে শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় নুয়ে পড়েন তিনি।

এমন অবস্থায় অসুস্থ খালেককে গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের সামনে ফেলে রেখে যান স্বজনরা। এরপর টানা চারদিন ওই কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান করেন তিনি। খবর পেয়ে ইউএনও তাকে উদ্ধার করে সোমবার (৩ জুন) সকালে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন।

মঙ্গলবার (৪জুন) সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বালী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আব্দুল খালেক সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ভাওয়াল গ্রামের মৃত মজিদ মাতুব্বরের ছেলে। তিনি চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে খালেক সবার বড়। তার দুটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।

অসহায় আব্দুল খালেক বলেন, আমার পরপর দুই স্ত্রী মারা যায়। দ্বিতীয় স্ত্রীর মারা যাওয়ার গত ১৪ বছর আগে প্যারালাইসিস হয়ে আমার এক সাইড পড়ে যায়। এরপর বসতভিটা যা ছিল তা বিক্রি করে চিকিৎসা করি। এখন আমার কোনো কিছুই নেই। আমার দুটি ছেলে আছে। তারা বিয়ে করে রাজবাড়ী তাদের শ্বশুর বাড়িতে থাকে। আমার কোনো খোঁজখবর রাখে না। আমার ভাই-বোনেরা সবাই আর্থিকভাবে ভাল আছে। তবে তারাও আমার দেখাশোনা করে না। সেজন্য আমি পাশের আটঘর ইউনিয়নের বিভাগদী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেই। সেখানে দুই বছর থাকার পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন বৃহস্পতিবার আমাকে আর রাখবে বলে ফেলে রেখে যায়।

আব্দুল খালেকের দুই ছেলে আলমগীর মাতুব্বর (৪০) ও কলম মাতুব্বর (৩৫) রাজবাড়ী বসবাস করায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের ফোন নম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি খালেকের কাছে। তবে জোসনা বেগম নামে খালেকের শ্বশুর বাড়ির এক নারী বলেন, আব্দুল খালেকের ছেলেদের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম, তারা কেউ ওনার দায়িত্ব নিতে চায় না। ওনার ভাই-বোন সবার বাড়িতেই বিল্ডিং ও জমিজমা আছে। তারাও তার খোঁজখবর নেয় না।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার অফিসের সামনে একজন বৃদ্ধ লোককে তার স্বজনরা ফেলে রেখে যায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, তার ছেলেরা শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি তার বসতবাড়ি বিক্রি করে নি:শ্ব হয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। তবে এখন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও তার ব্যয়ভার নিতে নারাজ। তাই শ্বশুর বাড়ির স্বজনরা এখানে ফেলে রেখে গেছেন। পরবর্তী প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের যোগাযোগ করে তাদের যে বৃদ্ধানিবাস আছে, সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি।

(এএনএইচ/এএস/জুন ০৪, ২০২৪)