ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের গাফিলতিতে অগ্নি দগ্ধে নিহত শিশু!
মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পথ আসতে ৫০ মিনিট সময় নিয়েছে তালতলী ফায়ার সার্ভিস কর্মিদের। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের অতিরিক্ত সময় নেওয়ায় মা বাবার চোখের সামনেই ঘরের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে জুনায়েদ নামের পাঁচ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে বইছে শোকের মাতম।
ঘটনাস্থলে দেরীতে পৌছানোর কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন তালতলী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন মাষ্টার বদিউজ্জামান।
অগ্নি দুর্ঘটনায় বসতঘর পুড়ে যাওয়া ও শিশু জোনায়েদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খান মিলন।
সোমবার (৩জুন) রাত আটটার দিকে তালতলীর নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে বড়অঙ্কুজান পাড়ার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩নং গেট এলাকার সালাম গাজীর বাড়ীতে এ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু জুনায়েদ সালাম গাজীর ছেলে। এঘটনায় জুনায়েদ এর মৃত্যুর খবরে শুনে বড়ভাই জুবায়ের অসুস্থ হয়ে তালতলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয় প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঘরে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে রেখে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যায় নিহত জুনায়েদের মা কুলসুম বেগম। কিছুক্ষণ পরে ঘরে আগুন জ্বলতে দেখে ডাক চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে এবং মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তালতলী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। বেশ কয়েকবার ফোনে চেষ্টা করার পরে ফোন রিসিভ করে তালতলী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে যাওয়ার আশ্বাস দেন তারা। ফোনে কথা বলার ৩০ মিনিট অতিবাহিত হলেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় আবারো ষ্টেশনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ষ্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্দেশ্যে গিয়েছেন বলে জানানো হয়। প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পরে মাত্র চার কিলোমিটার দুরত্বের ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তালতলী ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের কর্মীরা। ততক্ষণে ঘরে ঘুমিয়ে থাকা শিশু জোনায়ের মা বাবার চোখের সামনেই আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং এসময় ঘর থেকে আগুনে পোড়া শিশু জোনায়েদের মরদেহ উদ্ধার করে।
তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে কোন জরুরী সাইরেনের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তালতলী ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন মাষ্টার বদিউজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লাগার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, পথে নির্বাচনী জনসভা শেষে রাস্তায় মানুষ থাকায় তাদের পাশ কাটিয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সময় লাগাকে কারন হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এসময় ৫০ মিনিট সময় লাগার বিষয়টি অস্বীকার করে ১০মিনিট অতিরিক্ত সময় বেশি লেগেছে বলে স্বীকার করেন। ষ্টেশন থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ৩-৪মিনিটের দুরত্বের কথা জানান ষ্টেশন মাষ্টার। বারবার ফোন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ষ্টেশন মাষ্টার বদিউজ্জামান দুবার ফোন দেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রথমবার ফোন রিসিভ করেননি বলে জানান।
জরুরি সাইরেন না বাজানোর বিষয় জানতে চাইলে, সাইরেনটি অকেজো হয়ে পরেছে বলে জানান তিনি।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খান মিলন বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনায় ঘর পুড়ে যাওয়া ও এসময় দগ্ধ হয়ে জোনায়েদ নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এবিষয়ে তালতলী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে এবং ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে।
(এসএস/এএস/জুন ০৪, ২০২৪)