মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, কর্মিদের মারপিট
নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার পক্ষে প্রচারণায় সংসদ সদস্যের দুই ভাই, জনপ্রতিনিধিদের চাপ প্রয়োগ
স্টাফ রিপোর্টার : নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংসদ সদস্য ও মন্ডল গ্রপের এমডি আব্দুল মমিন মন্ডলের পরিবার। কৌশলে মন্ডল গ্রুপের এই কর্মকর্তাকে সংসদ সদস্যের মনোনীত ও বিশ্বস্ত প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মি ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকে তার পক্ষে কাজ করতে বলছেন সংসদ সদস্যের দুই ভাই।
এদিকে আব্দুল মমিন মন্ডল এমপি’র ছোট ভাই আব্দুল আলিম মন্ডল ও চাচাতো ভাই মন্ডল গ্রুপের পরিচালক, সিআইপি জুবায়ের মন্ডল প্রচারনায় নামার সাথে সাথে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ। একের পর এক হামলা হচ্ছে মন্ডল গ্রুপের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মি-সমর্থকদের ওপর। ওই প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্যের দুইভাই নির্বাচনী মাঠে থাকায় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহন বাধাগ্রস্থ হতে পারে বলে আশংকা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অপর প্রার্থীরা।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে বেলকুচিতে পৌছে রবি, সোম ও মঙ্গলবার দোয়াত কলম প্রতীকের পক্ষে টানা বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচিতে অংশ নেন সংসদ সদস্যের ভাই আব্দুল আলিম মন্ডল ও জুবায়ের মন্ডল।আজ মঙ্গলবার সকালে শেরনগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দোয়াত কলম প্রতিকের নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ডল গ্রুপের পরিচালক ও আব্দুল মমিন মন্ডলের ভাই আব্দুল আলীম মন্ডল। অনুষ্ঠানে তার অপর ভাই জুবায়ের মন্ডলও বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্যের দুই ভাই বেলকুচি পৌছার পর পরই দোয়াত কলম প্রতিকের প্রার্থী, মন্ডল গ্রুপের কটন ক্লাব (বিডি)’র জিএম-অপারেশন আমিনুল ইসলাম সরকারের কর্মিরা একের পর এক হামলা শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মি সমর্থকদের ওপর। রবিবার রাতে ভাঙচুর করা হয় উপজেলার জামতৈল বাজারে স্থাপিত মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ্ব বদিউজ্জামান ফকিরের নির্বাচনী অফিস। আজুগড়া মোড় এলাকায় পোষ্টার লাগাতে গিয়েও হামলার শিকার হন মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে কাজ করা কর্মিরা। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন রোকনুজ্জামান রোকনসহ অন্তত ৫ জন। এ বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর সেরাজুল ইসলাম (আনারস) বলেন, দলের নির্দেশ রয়েছে, কোন এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন কোন প্রার্থীর প্রচারণা করতে পারবে না। অথচ মমিন মন্ডলের ভাইরা সরাসরি দোয়াত কলমের নির্বাচনী প্রচারণা করছে।
এমপির নির্দেশেই তারা প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমি বা অন্য কেউ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তার সমস্যা। তাই তার নিজের কর্মচারিকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে ইচ্ছেমতো উপজেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করতে চান তিনি।
মীর সেরাজুল আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল এমন কথাও বলে বেড়াচ্ছে ২ হাজার ভোট পেলেও তিনি পাশ। ভোটারদের মাঝে এমন আতংক ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
অপর প্রার্থী আলহাজ্ব বদিউজ্জামান ফকিরের (মোটর সাইকেল) প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক মাসুদ ফকির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা স্বত্বেও এমপির ভাইয়েরা একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। এমপি মমিন মন্ডল সরাসরি আমিনুল ইসলামকে সমর্থন করেছেন।
বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস বলেন, এমপি দলের নেতৃবৃন্দ ও ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে নিয়ে তার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাধ্য হয়েই অনেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুলের কাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের ভাই ও মন্ডল গ্রুপের পরিচালক জুবায়ের মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমিনুল সাহেব মন্ডল গ্রুপে আমার ইউনিটে চাকরী করেন। এ জন্য আমি তার নির্বাচনী প্রচারণা করছি। এমপির ভাই হলেও আমি এই আসনের একজন ভোটার, আমার নাগরিক অধিকার আছে কারও পক্ষে কাজ করার।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের মোবাইলে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, আগামী ৮ই মে অনুষ্ঠিত হবে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহন। প্রথমবারের মত ইভিএম এ ভোটপ্রদান করবে উপজেলাবাসি।
(এসএস/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২৪)