মা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার
মাদারীপুর প্রতিনিধি : তীব্র গরমে মা-মেয়ে বিক্রি করছেন লেবুর শরবত। পথচারীরাও এই শরবত খেয়ে খুশি। তীব্র গরমে এক গ্লাস শরবতে ক্লান্ত পথচারী ও হাসপাতালে আসা-যাওয়া মানুষগুলো খেয়ে একটু স্বস্তি পাচ্ছেন। এদিকে এই লেবুর শরবত বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার। যোগাড় হয় পাচ ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজীর হাওলা গ্রামের ৩নং ব্রীজ এলাকার রাজ্জাক বেপারীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪৫) ও তাদের মেঝ মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (২০) তীব্র গরমে লেবুর শরবত বিক্রি করছেন। মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের প্রধান গেটের রাস্তার ফুটপাতে এই শরবত বিক্রি করছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে আসা-যাওয়ার পথে রোগীসহ রোগীর সাথে থাকা লোকজন এবং পথচারীরা এই শরবত কিনে খাচ্ছেন। এক গ্লাস শরবত দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন তাদের বিক্রি হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। সেই টাকায় চলে তাদের সংসার। যোগাড় করা হয় চার বোন ও এক ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ। তীব্র গরমে মা ফাতেমা আক্তার ও মেয়ে সুরাইয়া আক্তারের কষ্ট হলেও জীবন জীবিকার জন্য তারা প্রতিদিনই এই শরবত বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে মেয়ে সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা রাজ্জাক বেপারী শীতের সময় পিঠা বিক্রি করেন। কিন্তু শীত গেলে তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তা দিয়ে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মামা এই শরবত বিক্রি করতেন। পরে মামার পরার্মশে আমি ও আমার মা এই শরবত বিক্রি শুরু করি। আল্লাহর রহমতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। তা দিয়েই আমার সংসার ও আমার পাচ ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করতে হয়। এই গরমে লেবু দিয়ে ঠান্ডা পানির শরবত খেতে সবাই পছন্দ করেন। গরমের কারণে বিক্রির ভালো হয়।
শরবত বিক্রিতা ফাতেমা বেগম বলেন, আমার বড় মেয়ে ফাত্তা আক্তার মাদারীপুর সরকারী কলেজে অর্নাস পড়ে। এরপর সুরাইয়া আক্তার কিছুদুর পড়াশুনা করলেও অভাবের কারণে পড়াশুনা করতে পারেনি। সেই আমার সাথে লেবুর শরবত বিক্রি করতে সহযোগিতা করে। এরপর অন্যন্যা আক্তার মাদারীপুর বালিকা উচ্চা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে। মিম আক্তার হাজীর হাওলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে ময়না আক্তার ও একমাত্র ছেলে দুইজন একসাথেই স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। ওর বাবার একার রোজগারে সংসার চালানো সম্ভব না। তাই আমি ও আমার মেয়ে সুরাইয়া এই শরবত বেচার কাজ শুরু করি। এতে করে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচসহ অন্যান্য খরচ যোগাড় করতে পারছি। কাজকে আমরা কখনওই ছোট করে দেখিনা। তাই মা ও মেয়ে মিলে এই কাজ করছি।
শরবত খেতে আসা অটোরিকসা চালক সজীব হোসেন বলেন, প্রচন্ড গরমে তৃষ্ণায় অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তাই এখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় এক গ্লাস লেবুর শরবত খেতে পেরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।
হাসপাতালে মেয়ে নিয়ে আসা শহরের গোলাবাড়ি এলাকার সিমা আক্তার বলেন, হাসপাতালে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। অনেক সময় লাগবে। গরমে গলা শুকিয়ে গেছে, তাই এখানে এসে এক গ্লাস লেবুর শরবত খেলাম।
মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, মা ও মেয়ে দুজনে মিলে পরিশ্রম করে পরিবারের খাবার যোগাড়সহ অন্য পাচ ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ যোগাড় করছেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও তা পারেননা। তাই আমি বলবো, তাদের দেখে অন্যরাও নিজেরাই তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করবেন।
(এএসএ/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২৪)