রূপকথার গল্প
তুষার কন্যা ও সাত বামুন
একদেশে ছিল অনিন্দ্যসুন্দরী এক রানী। একদিন এক কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকালে সে জানালার পাশে বসে সেলাই করছিল। বাইরে অনবরত তুষারপাত হচ্ছিল। হঠাৎ তার হাত কেটে একফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়লো সেই তুষারের ওপর। শ্বেতশুভ্র তুষারের ওপর লাল রক্তের ফোঁটা দেখে রানী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল তার যেন এমন একটি মেয়ে হয় যে হবে তুষারের মতো শুভ্র আর তার ঠোঁট হবে রক্তরাঙ্গা লাল। ঈশ্বর রানীর সেই ইচ্ছা পূরণ করলেন। রানীর কোলে জন্ম নিল ফুটফুটে এক রাজকন্যা। তার তুষারের মত ধবধবে শরীর আর রক্তের মত লাল ঠোঁট। তাই তার নাম রাখা হল তুষারকন্যা।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তুষারকন্যার জন্মের সময় রাণী মারা গেলেন। তারপর সৎ মায়ের সংসারে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল তুষারকন্যা। যতই বড় হচ্ছিল তুষারকন্যা ততই যেন তার রূপ ফুটে উঠতে শুরু করল। সৎ মায়ের ছিল একটি জাদুর আয়না। সেই আয়নার সামনে সে যখনই প্রশ্ন করত কে বেশি সুন্দরী, জাদুর আয়না সবসময় উত্তরে রানীর নাম বলত। কিন্তু তুষারকন্যা বড় হলে জাদুর আয়না উত্তরে বলত তুষারকন্যার নাম।
তুষারকন্যার এই রূপের জন্য তার সৎ মা তাকে খুবই হিংসা করত। তার ওপর জাদুর আয়নার এই উত্তরে সে প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে এক বিশ্বস্ত চরকে দায়িত্ব দিল তুষারকন্যাকে হত্যার জন্য। রাণীর চর তুষারকন্যাকে হত্যা করার জন্য নিয়ে গেল গভীর জঙ্গলে। কিন্তু তুষারকন্যাকে দেখে তার মায়া হলো। তাই সে তাকে মারতে পারলো না। বরং একটি খরগোশ মেরে তার রক্ত নিয়ে গিয়ে রাণীকে দেখাল। এদিকে গভীর জঙ্গলে তুষারকন্যা একা একা ঘুরে বেড়াতে লাগল।
একসময় সে একটি বাড়ি খুঁজে পেল জঙ্গলে। বাড়িটি ছিল সাতজন বামুনের। তারা তুষারকন্যাকে আশ্রয় দিল তাদের বাড়িতে। এভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু একদিন রাণী জেনে গেলেন তুষারকন্যার কথা। সে তুষারকন্যাকে জঙ্গলে খুঁজতে এলো ছদ্মবেশে। তুষারকন্যাকে একটি বিষ মেশানো আপেল খেতে দিল সে। সেই আপেল খেয়ে তুষারকন্যা ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। সাত বামুন কাজ শেষে ঘরে ফিরে অচেতন তুষারকন্যাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। এমন সময় সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক রাজকুমার। সে ঘোড়া থামিয়ে এগিয়ে এলো। কফিনের মাঝে অপূর্ব সুন্দরী তুষারকন্যাকে দেখেই সে তার প্রেমে পড়ে গেল। তারপর রাজকুমারের ছোঁয়ায় মৃত্যু থেকে ফিরে এলো তুষারকন্যা।
আমাদের অতি পরিচিত এই রূপকথার গল্পটি ‘তুষারকন্যা আর সাত বামন’ নামে পরিচিত হলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে এই গল্পটি থেকে তৈরি হয়েছে সিনেমা। এমনকি ডিজনীর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য রূপকথার চলচ্চিত্র ছিল এটি। তবে সবথেকে মজার কথা হলো, এই গল্পটি রূপকথার হলেও বাস্তবে ছিল এমনি একজন চরিত্র। যার নাম ছিল মার্গারেট। ষোল শতকের এক সম্ভ্রান্তবংশীয় তরুণী এই মার্গারেটের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছিল তুষারকন্যার এই গল্প।