বগুড়ায় বাসদের তিস্তা রোডমার্চের সমাবেশ
তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি
এটিএম রাশেদুল ইসলাম, বগুড়া : তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে "ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশকে মরুভূমি হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করুন" এই আহ্বানে বগুড়ায় বাসদের তিস্তা রোর্ডমার্চের সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের উদ্যোগে আজ সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটায় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ বগুড়া জেলা সদস্যসচিব কমরেড এ্যাড. দিলরুবা নূরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিরাজগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক নব কুমার কর্মকার, নওগাঁ জেলা আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল, রজশাহী জেলা আহ্বায়ক আলফাজ হোসেন, নাটোর জেলা আহ্বায়ক কমরেড দেবাশীষ রায়, বাসদ বগুড়া জেলা সদস্য কমরেড সাইফুজ্জামান টুটুল প্রমূখ নেতৃবৃন্দ ।
কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, "মানব দেহের শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে থাকা নদী ও পলি দিয়ে গঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি আজ পানির অভাবে মরুকরণের হুমকির মুখে। এই অভাব প্রাকৃতিক কারণে নয়, মানুষের সৃষ্টি। চীন, নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা নদীগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। এই নদীগুলোই বাংলাদেশের প্রাণ প্রবাহ। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমস্ত আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে ভারত ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার আগ্রাসী তৎপরতার ফলে পানির প্রবাহ কমে গিয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে নদী দখল ও দূষণ। একসময় দেশে ১ হাজার ২০০টি নদী ছিল। সরকারসমূহের ভ্রান্তনীতি ও দখল-দূষণের কারণে নদী মরে গিয়ে এখন ২৩০-এ নেমে এসেছে। খরা মৌসুমে বেশিরভাগ নদীতেই পানি থাকে না। একসময়ের প্রমত্তা অনেক নদীই এখন খাল-নালায় পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থিত জলপ্রবাহ নিয়ে এর অববাহিকার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশে ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার আর ভারতে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দেয়ার কারণে পানি পাচ্ছে না বাংলাদেশ।"
কমরেড নিখিল দাস বলেন, "খরা মৌসুম আসতে না আসতেই তিস্তার পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে কখনো ৫০০ কিউসেক-এর নিচে নেমে যায়। অথচ ঐতিহাসিক গড় (১৯৭৩-১৯৮৫) অনুযায়ী পানির প্রবাহ থাকার কথা কমপক্ষে ১০ হাজার কিউসেক। প্রমত্তা তিস্তার এই বেহাল দশা কেন? পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্রের পরে তিস্তা চতুর্থ বৃহত্তম নদী। উত্তর সিকিমে কৈলাস হ্রদ থেকে শুরু করে হিমালয় পর্বতের বুক চিরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে ভারতের জলপাইগুড়ি হয়ে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্বেও ভারত বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে একতরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না।"
সভাপতির বক্তব্যে কমরেড দিলরুবা নূরী বলেন, "তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাসহ ভারত থেকে আগত সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি ভারতের শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়ে সমস্ত প্রকারে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকেছে। আমাদের শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরএক অংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, ভারত একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। ফলে সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অনুযায়ী ভারত পার্শ্ববর্তী দেশের উপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক-সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়।"
সমাবেশে অন্যন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক নীতি লংঘন করে ভাটির দেশ বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ বিবেচনা না করে একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করছে। বাংলাদেশের সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সমস্ত ফোরামে বিষয়টি উপস্থাপন করা। কিন্তু সে ধরনের কোন পদক্ষেপ আজও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কারোরই কানে এই দাবি প্রবেশ করছে না। ভারতের পানি আগ্রাসন, নদী দূষণ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
রোডমার্চ বগুড়া হতে রংপুরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়। প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরও জানানো হয়, আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল ২০২৪) বেলা এগারোটায় তিস্তা রোর্ড মার্চের সমাবেশ রংপুরে শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে এবং বিকাল ৪ টায় নিলফামারীর ডিমলা শহীদ মিনারে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
(এটিআর/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২৪)