ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিবস
তিন বছরেও শেষ হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ
শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : আজ ১৭ এপ্রিল বুধবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আঁখিরা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু ও কিশোর- কিশোরীকে পাকিস্তানী খানসেনারা উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট সংলগ্ন আঁখিরা নামক স্থানের পুকুর পাড়ে ব্রাশ ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সেই সব বীর শহীদদের স্বরণে উপজেলার আঁখিরা বদ্ধ ভূমিতে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারী গণপূর্ত বিভাগের তত্বাবধায়নে ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যায়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও আজও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। ঠিকাদারের নেই খোঁজ। ফলে স্মৃতিস্তম্ভটিতে বীরমুক্তিযোদ্ধারাও শ্রদ্ধা নিবেদনসহ কোন কর্মসূচী পালণ করতে পারছেন না। এনিয়ে স্থানীয় বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী খানসেনা ও তাদের এ দেশীয় রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মুক্তিকামী মানুষ যখন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল ঠিক এমনই এক সময় আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার পার্শ্ববর্তী আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, শেরপুর, খোলাহাটি, বদরগঞ্জ ও ভবানীপুর এলাকার অর্ধশত হিন্দু পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ফুলবাড়ীতে নিয়ে আসে পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার (বর্তমান ফুলবাড়ী) রামভদ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার। কিন্তু কেনান সরকার ওই পরিবারগুলোকে ভারতে পৌঁছে না দিয়ে তুলে দেয় ফুলবাড়ীতে অবস্থানরত খানসেনাদের হাতে। এর পরিবর্তে কেনান সরকার হাতিয়ে নেয় ওই পরিবারগুলোর সাথে থাকা বিপূল অংকের নগদ অর্থসহ স্বর্ণালংকার। খানসেনারা আটক পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ধরে নিয়ে আসে আঁখিরা পুকুর পাড়ে। সকাল ১১টায় সকলকে পুকুর পাড়ে লাইন ধরে দাড়িয়ে রেখে স্টেনগানের ব্রাশ ফায়ারে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করে। এ সময় দু’একজন শিশু-কিশোর প্রাণে বেঁচে গেলেও পরে তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। অবশ্য দেশ স্বাধীনের পর রাজাকার কেনান সরকারকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে প্রতিশোধ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এছার উদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা আখিরায় গিয়েছিলাম। নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারেরও দেখা পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ তিন বছরেও স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিতে পারেনি। তাই ওখানে কোন কর্মসূচী পালণ করা সম্ভব হচ্ছে না। একইসাথে তিনি দ্রæত স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ কাজ শেষ করে হস্তান্তারের দাবি জানান।
স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার বাদলের সাথে একাধিকার ফোন কলে যোগযোগ করলেও তিনি ফোন কলটি গ্রহণ করেননি।
গণপূর্ত বিভাগ দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনের দাবি স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যেই। হস্তান্তারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু রক্ষণা-বেক্ষণের জনবল না থাকায় এখনও হস্তান্তর সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি শিঘ্রই আলোচনার মাধ্যমে হস্তান্তর সম্ভব হবে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মীর মো. আল কামহ্ তমাল বলেন, স্মৃতিস্তম্ভর কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি এবং বুঝিয়ে দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানিয় সংসদ সদস্য গণপূর্ত বিভাগের সাথে কথা বলেছেন, এরপর থেকে গণপূর্ত বিভাগ আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। ঠিকাদারকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দিবসটি উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয়ভাবে একটি দোয়ার আয়োজন করতে বলা হবে। বীরমুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও করা হবে। কিন্তু, বাস্তবতায় দিবসটি পালনে ছিলোনা কোন পদক্ষেপ।
(এসএস/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২৪)