শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল
শিশু ওয়ার্ডে শয্যা নেই, ফ্লোর-বারান্দায় নিচ্ছে চিকিৎসা
কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : ১০০ শয্যা বিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ঢুকলেই মনে হবে কোন রেল স্টেশন বা লঞ্চ টার্মিনাল। শিশু ওয়ার্ডে সীট না পেয়ে খোলা বারান্দার ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে নবজাতক সহ অনেক শিশু রোগীর। ঋতু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার খারাপ প্রভাবে প্রতিদিন ডায়রিয়া, জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে শরীয়তপুরের পল্লী অঞ্চলের শিশুরা। প্রতিদিন তিন থেকে চার শত শিশু এসব রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। অসুখে আক্রান্ত এসব শিশুদের বয়স এক সপ্তাহ থেকে থেকে ৪ বছর।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর শয্যা সংখ্যা ১৪ টি হলেও ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু প্রতিদিন ঠান্ডা জনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। যা হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার চার গুণেরও বেশি। ফলে এসব রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হঠাৎ করেই শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড, মেঝে ও বারান্দায় এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজারের অধিক শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৬৫ জন, ডায়েরিয়া আক্তান্ত হয়ে ৩৭ জন ও মেডিসিনি বিভাগে ৯৪ জনসহ ২৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১০০ টি। সেখানে সর্বমোট দেড় গুণ রোগী বেশি ভর্তি। অন্যদিকে শিশুদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ১৪ টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৬৫ জন শিশু। যা ধারণ ক্ষমতার ৪ গুণেরও বেশি। ১৪ জন রুগীর চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে চলছে চারগুণেরও অধিক শিশুর চিকিৎসা।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত গরম ও ঠান্ডায় শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুর অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের বিষয়ে আরও বেশি সর্তক হওয়া।
সদর হাসপাতালে দুইদিন যাবৎ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৯ দিনের শিশু তাসনিহা। তার মা রিমি আক্তার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দার ফ্লোরে রেখে মেয়ের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাসনিহা গত তিন দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। রিমি আক্তার বলেন, হঠাৎ করেই আমার নবজাতক মেয়েটির জ্বর ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। চিকিৎসা নিতে এসে দেখি হাসপাতালে শয্যা নেই। অনেক শিশুই বাইরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছে। নার্স, ডাক্তারা নিয়মিত দেখাশুনা করলেও কোন সীট মিলছেনা। শিশুকন্যার জীবন নিয়ে খুব শংকায় রয়েছি।
শরীয়তপুর পৌরসভার বাঘিয়া গ্রামের জাকির তালুকদারের ছেলে হাবিবুর রহমানের বয়স চার মাস। শিশু হাবিবের নানি রুণা বেগম বলেন, ঠান্ডা ও কাঁশি নিয়ে ৪ দিন ধরে ভুগছে আমার নাতি হাবিব। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে শিশু রোগীদের ভীড় থাকায় কোনো শয্যা নেই। এখানে অনেক গরম। ঠিকমত কোথাও দাঁড়ানোও যাচ্ছে না। হাবিব কাঁশির যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্না করছে। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বাসা কাছে হলেও এখানে চিকিৎসকরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার কারনে কষ্ট করে চিকিৎসা নিচ্ছি।
তাসনিহা ও হাবিবের মত এক মাস ৪ দিন বয়সী সৃষ্টি রানী ভক্ত, সাড়ে ৪ বছর বয়সের সাবরিনা আক্তার, ৭০ দিন বয়সের মাইশা সহ অনেক শিশুর চিকিৎসা হচ্ছে দুরাবস্থপনার মাঝে।
শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শাপলা আক্তার বলেন, হাসপাতালে কয়েকদিন যাবত জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। অতিরিক্ত রোগী হওয়ার কারণে এসব শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হলেও আমরা তাদের যথাযথ পর্যবেক্ষনে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র শিশু পরামর্শক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, মূলত আবহাওয়া পরিবর্তন ও মৌসুমী প্রভাবের কারণেই শিশুরা জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডায় অধিকাংশ শিশুর নাক বন্ধ হয়ে রয়েছে। হাতে গোণা কয়েকজন শিশুর নিমুনিয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য শিশুদের নাকটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিলেই তারা সুন্দর ভাবে শ্বাস নিতে পারছে। মা-বাবা যদি আরও সতর্ক হোন, তাহলে এমন সমস্যা হবে না। ভর্তি হওয়া শিশুরা শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠবে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত এসব রোগে যেন শিশুরা আক্রান্ত না হয়, সেজন্য মা বাবার উচিৎ শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শুকনো ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে খাবার খাওয়ানো। সর্বোপরি মা বাবার সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ১০০ শয্যার হাসপাতালে কয়েকগুণ রোগীকে সেবা দিতে স্টাফদের কষ্ট হলেও আমরা সর্বাধিক সেবা নিশ্চিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
(কেএনআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪)