কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি বিএনপির
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের প্রতিটি কারাগারে কারাবিধির সমস্ত সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে বন্দি নেতাকর্মীদের ওপর বীভৎস নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত তিন মাসে কারা নির্যাতনে বিএনপির ১৩ জন নেতার মৃত্যু হয়েছে। প্রত্যেকটি মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে কারা হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান তিনি।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার উদগ্র বাসনা চরিতার্থ করতে গত ৭ জানুয়ারি বিরোধী দলহীন উদ্ভট ডামি নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও কণ্টকমুক্ত করার জন্য গুম-খুন-গায়েবি মামলা, হুলিয়া, গ্রেপ্তার-হয়রানি, নিপীড়ন, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর ভাঙচুরের যে ভয়াবহতা চলছিল, তা এখনো অব্যাহত রেখেছে একনায়ক ডামি সরকার। অরাজকতা, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার বৃত্তে জনমানুষকে বন্দি করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, জনগণকে প্রতারিত করে, রাষ্ট্রীয় পেশীশক্তির জোরে ৭ জানুয়ারি ভোটারহীন পাতানো ভুয়া নির্বাচনে ষোলকলা পূর্ণ করলেও ক্ষমতা হারানোর ভয়ে থেমে নেই বিরোধী দল-মতের ওপর বহুমাত্রিক জুলুম, উৎপীড়নের অমানবিক নিষ্ঠুরতা। দেশজুড়ে বেপরোয়া গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, দেশের কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বিএনপি নেতাকর্মীতে ঠাসা। কারা সেলগুলো একেকটি শ্বাসরুদ্ধকর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। অতিমাত্রায় উৎসাহী কর্মকর্তারা গেস্টাপোদের ন্যায় মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কারাগারের ভেতরে কারাবিধির সমস্ত সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে বন্দি নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে বীভৎস নিপীড়ন। খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রলীগের সাবেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কারা কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিয়ে শেখ হাসিনা কারাগারেও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালাতে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। কারা হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীদের কারো না কারো মৃত্যুর সংবাদ আসছে প্রায়ই। গত তিন মাসে কারাগারে নির্যাতন করে বিএনপির ১৩ জন নেতার মৃত্যু হয়েছে কারা হেফাজতে। প্রত্যেকটি মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
গতকাল বিনা অপরাধে রংপুর কারাগারে বন্দি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি মহিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলামকে নির্যাতন করে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, মনোয়ারুলের বাবা ফজলে রহমান, ছোট ভাই হারুনসহ স্বজনরা বলেছেন, ১৩ জানুয়ারি সুস্থ সবল মনোয়ারুলকে পুলিশ দিনের বেলায় বাসা থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই দিন আদালতে চালান না দিয়ে পরের দিন রাত পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে বর্বরোচিত কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তার পুরো শরীরে, পায়ে, পিঠে ও মাথায় আঘাতের গভীর চিহ্ন দেখা গেছে। পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে মনোয়ারুলকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের সাথে আঁতাত করায় একই মামলায় একই ধারায় জামিন মিলেছে শাহজাহান ওমরের। অথচ মহাসচিবসহ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর জামিন মিলছে না। এটাতে প্রমাণিত হয় শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশ ও আদালত একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া এখনো বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় লাখো নেতাকর্মী মানবেতর অবস্থায় পলাতক জীবন যাপন করছেন। খেয়ে না খেয়ে আদালতের বারান্দায় ধর্না দিচ্ছেন। গণভবন-বঙ্গভবনে খোলা কমান্ড সেন্টারের নির্দেশে দীর্ঘ দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজো বন্দি করে রাখা হয়েছে।
(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪)