ঝালকাঠিতে পরকীয়ার জেরে আ.লীগ নেতা খুন
মাহবুবুর রহমান, ঝালকাঠি : পরকীয়ার জেরে ঝালকাঠি পৌর আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ড সভাপতি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার শাহআলম রিপন মল্লিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একই এলাকার সৗদি প্রবাসী কামাল হোসেনের স্ত্রী শিরিন আক্তারের ঘরে সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় এই হত্যাকান্ড ঘটে। তবে ঐ নারীর সাথে রিপন মল্লিকের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বলে জানিয়েছে স্থানীয় অনেকে। তবে তার দেয়া আঘাতেই রিপন মল্লিক গুরুতর আহত হয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন আটক শিরিন আক্তার। এ ঘটনায় রিপন মল্লিকের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর/সার্কেল) মো: মহিতুল ইসলাম।
পুলিশ, নিহতের স্বজনরা জানায়, পূর্ব সম্পর্কের কারনে কৃষ্ণকাঠি মল্লিক বাড়ির বাসিন্দা আ'লীগ নেতা রিপন মল্লিক প্রায়ই সৌদি প্রবাসী কামালের স্ত্রী শিরিন আক্তারের ঘরে আসা যাওয়া করতেন। জমি জমা সংক্রান্ত টাকা পয়সা নিয়ে লেনদেন চলে আসছিল তাদের। শিরিনের ছেলে ইমন হোসেন গত ৪ দিন পুর্বে ঢাকায় যায়। শিরিন ঘটনার রাতে তার ঘরে একা ছিলো বলে এলাকাবাসী জানায়।
শিরিনের প্রতিবেশী হারিছ হোসেন বলেন, 'রাত সারে ১০ টায় শিরিন তার ঘরের ভিতর থেকে ডাক চিৎকার দিচ্ছিলো। এসময় আমিসহ আশপাশের মানুষ ঘরে ঢুকে দেখি রিপন মল্লিক অর্ধ উলঙ্গাবস্থায় মেঝেতে পরেআছে। সবাই মিলে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান রিপন মারা গেছে। তারপর আমরা রিপনের লাশ তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেই।'
নিহত রিপনের ভাই সমীর মল্লিক বলেন, 'আমাকে স্থানীয়রা ফোনে জানায় আমার ভাইকে মেরে মাথা ফাটিয়েছে। তারপর আমি শিরিনের ঘরে এসে দেখি মেঝেতে রক্ত লেগে আছে। আর আমার ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তখন শিরিন তার ঘরেই বসা ছিলো।'
রিপন মল্লিকের আরেক ভাই মনির মল্লিক জানান, সোমবার রাত ১০ টার পরে রিপন মল্লিককে প্রতিবেশি শিরিন আক্তার তার বাড়ীতে ডেকে নেয়। রাতে আমরা খবর পাই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে আমরা রিপন মল্লিককে মৃত অবস্থায় পাই। তার মাথার পিছনে রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। রিপন মল্লিককে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রিপন মল্লিক শিরিনের কাছে জমি বিক্রির টাকা পেত বলে জানান রিপনের ভাই।
শিরিন আক্তারের বোনের ছেলে লিয়ন হোসেন বলেন, 'আমার খালা/খালু রিপন মল্লিকের কাছ থেকে জমি কিনেছে। সেই সুবাদে রিপন মল্লিক আমার খালার বাসায় আসা-যাওয়া করতো। রিপন মল্লিকের সাথে তার ভাই সমীর মল্লিকের সাথে জমি নিয়ে চাপা বিরোধ ছিলো। তবে ঘটনার দিন কেনো রিপন মল্লিক খালার ঘরে আসছে তা আমাদের জানা নেই।'
অন্যদিকে ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো: মহিতুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা এটাকে হত্যাকান্ড মনে করছি। এর পিছনে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট পাবার পরে বিস্তারিত বলা যাবে। এ ঘটনায় শিরিন আক্তার নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। নিহত রিপন মল্লিকের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শিরিন জানিয়েছে সোমবার রাতে রিপন তার ঘরে ঢুকে জামা কাপড় খুলে ফেলে। এ অবস্থায় সে ডাক চিৎকার দেয় এবং রিপনকে ধাক্কা দেয়। এক পর্যায় রিপনকে দরজার লাট দিয়ে আঘাত করে। এতে সে গুরুতর জখম হয়। পরে এলাকাবাসী এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
(এমআর/এসপি/জানুয়ারি ১৬, ২০২৪)