নির্বাচনে না গিয়ে ২০১৪ সালের মতো আবারও ভুল করল বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি : ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের পূর্বের যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্বাচনে যাবে না এবং আন্দোলন চালিয়ে যাবে। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতোই ভুল করলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে দলটি বারবারই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমনকি তারা এও বলছেন, বিএনপির নেতারাও কথায়, ভাবভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে তারাও মনে করেন এবারও নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি সেই ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করছে।
২০২০ সালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চট্টগ্রাম নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এই সরকারের আমলে আগের দু-একটি নির্বাচন বর্জন সঠিক হয়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চায়।… আমরা মনে করি যে অতীতে দু-একটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। এরপর থেকে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমাদের দলকে জনগণের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা মনে করি, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
২০১৫ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি ‘ভুল’ করেছে- এমন মন্তব্য করে প্রয়াত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তার পরবর্তী সময়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে অন্তত অংশ না নিলে আরও বড় ভুল করবে।
ভুল যে করেছিলো বিএনপি তা বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নেয়া। ওই নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিকে এখনকার মতো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না। তবে বাস্তবতা মেনে নিয়েই তা মোকাবেলার চেষ্টা করছে বিএনপি।’
এদিকে গত ৫ ডিসেম্বর রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া বাজারে স্থানীয় জনগণ ও দোকানদারদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপির বড় ভুল।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা তাদের বড় ভুল। তারা নির্বাচন করলে দেশে নেতা তৈরি হতো। নির্বাচন হলো জনগণের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক স্থাপনের পন্থা। এটা থেকে সরে যাওয়া ঠিক হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ মোতাবেক এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণের দায়িত্ব হলো নিজের ভোট নিজে প্রয়োগ করা। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তাই জনগণকে ভোট দিয়ে নিজের অধিকার প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে দেশের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় মনে করেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি যে জ্বালাও পোড়াও এর রাজনীতির পথ ধরেছিলো সেখানেই তাদের সাথে জনগণের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। তাদের এখনকার যে আন্দোলন তা কোনভাবেই জনসম্পৃক্ত নয়, নিজেদের এজেন্ডা পূরণে জনগণকে হেনস্তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বা‘লাও পোড়াও হত্যাযজ্ঞকে কীভাবে কেউ আন্দোলন বলে দাবি করতে পারে। আন্দোলনের এই ধারার জন্য বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে বর্জন করেছে। ফলে কিছু বিচ্যুতি নজরে পড়লেও মানুষ বিএনপিকে বেছে নিচ্ছে না। কারণ তারা মনে করে আওয়ামী লীগের বিকল্প কখনো বিএনপি হতে পারে না। এবারের নির্বাচনে গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগটা তারা নিতে পারতো। সেটা না করে আবারও জ্বালাও পোড়াও চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এটাকে একইভুলের পুনরাবৃত্তি হিসেবেই দেখছি।’
(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩)