গবেষণা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি
স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের এমন ৭৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী বিষণ্নতায় ভুগছেন। এছাড়া যাদের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রায় পাঁচ হাজার পরীক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ চালান। জরিপে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিষণ্নতার বিষয়টি উঠে এসেছে।
গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ের বিষণ্নতায় ভুগছেন। এরমধ্যে মাঝারি বিষণ্নতায় ২৬ শতাংশ, অত্যধিক বিষণ্নতায় ২৬ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী মারাত্মক পর্যায়ের বিষণ্নতায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, বিষণ্নতা বৃদ্ধি ও হ্রাস উভয় পক্ষেই প্রভাবক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। বিষণ্নতা বৃদ্ধির পেছনে প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে লিঙ্গ (ছেলে বা মেয়ে), ব্ল্যাকমেইলের শিকার, পারিবারিক সমস্যা, গুরুতর অসুস্থতা, কোভিড আক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল ও মানসিক সমস্যা। অন্যদিকে আত্মবিশ্বাস, শরীরচর্চা, পড়াশোনার সময়, ধর্মচর্চা বিষণ্নতা হ্রাস করতে ভূমিকা পালন করে বলে জরিপে উঠে এসেছে। তবে পারিবারিক আয় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বিষণ্নতার প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হলেও এদের প্রভাব খুব জোরালো নয়।
এ গবেষণার আরেক গবেষক আবু বকর সিদ্দিক জানান, ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্নতার ভোগার ঝোঁক প্রায় দ্বিগুণ। খুব সম্প্রতি কোনোপ্রকার ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া ও পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্নতার ভোগার ঝোঁক যথাক্রমে দ্বিগুণ ও তিনগুণ। অন্যদিকে, যাদের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতার হার অধিক এবং ঝোঁক প্রায় দেড়গুণ। তবে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতন এবং নিয়মিত শরীরচর্চাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার তুলনামূলক কম এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝোঁক যথাক্রমে ১.৪ ও দ্বিগুণের কম।
বিষণ্নতা হ্রাস করার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সৎসঙ্গ, উত্তম পারিবারিক পরিবেশ ও বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে শরীরচর্চা ও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের শুধু দৈহিক সুস্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। শুধু ভালো একাডেমিক ফলাফল নয়, দৈহিক ও মানসিকভাবে বলিষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এ গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিউল হাসান ও আল মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মুনমুন সরকার, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের মাহমুদুল হাসান মিলাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের আখের আলী এবং চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের আহমেদ।
(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩)