হাতেনাতে গ্রেফতার ৩৪
হরতাল-অবরোধে ককটেলের ব্যবহার বেড়েছে: ডিএমপি
স্টাফ রিপোর্টার : গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে দলটি ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিচ্ছে। হরতাল-অবরোধের প্রথমদিকে ককটেল বিস্ফোরণের ব্যবহার কম থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে সেটি বেড়েছে। এসময়ে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, গত ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হরতাল-অবরোধে যে নাশকতা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা হচ্ছে, এর বড় একটি অংশ আমরা এক্সিকিউট করতে দেইনি। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রথমদিকে ককটেলের ব্যবহার কম ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে সেটি বেড়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি জানান, গত ৩০ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেছে। অন্য দুজনও রাজনৈতিক দলের কর্মী। তবে তাদের কোনো পদ আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গ্রেফতাররা হলেন- পল্টন থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন হোসেন রনি, আশিকুর রহমান পান্না, ও বিল্লাল হোসেন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, গত ৩০ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নির্বাচনী আসনগুলোর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের আশপাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেদিন ছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। সেদিন বিকেল ৩টার কিছু পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে ২-৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
তিনি আরও বলেন, এরপর ডিএমপির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহাতীতভাবে সঠিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে আমরা কাজ করি। এরই ধারাবাহিকতায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতাররা ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে। তারা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া, রমনার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন হোসেন রনি ও বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ১২টি ঘটনা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
তিনি জানান, গ্রেফতার চারজন মোট ২১টি ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু মামলা রয়েছে। আরও কোনো ঘটনায় জড়িত কি না এবং তাদের পেছনে কারা রয়েছে তাদেরও আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, বিভিন্ন ঘটনার সময় আমরা হাতেনাতে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। তদন্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় যাদের নাম আসছে তাদের গ্রেফতার করছি। যেন নিরীহ কোনো ব্যক্তি ভুল বা হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য নিশ্চিত না হয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, কম হলেও আমরা কোয়ালিটি অ্যারেস্ট করতে পেরেছি। তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করতে না পারলেও তদন্তে কারও নাম এলে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা যেকোনোভাবে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, যারা হরতাল-অবরোধ আহ্বান করে তাদের উদ্দেশ্য সর্বসাধারণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করা। এজন্য তারা এ ধরনের কাজ করছে। তারা নিজেরা গ্রেফতারের ভয়ে এসব করার জন্য লোক ভাড়া নেয়। ভাড়া করা লোকদের খাবার ও টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া, দলে একটা অবস্থান করে দেওয়া হবে এ ধরনের আশ্বাসেও অনেকের মাধ্যমে এসব নাশকতা করানো হচ্ছে।
‘গ্রেফতার চারজনের মধ্যে দুজনের দলীয় পরিচয় মিলেছে। বাকি দুজনও দলের কর্মী। তবে পদ আছে কি না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়’- যোগ করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ছদ্মবেশে যদি কেউ যানবাহনে চড়ে আগুন দেয় সেটি প্রতিরোধ করা কষ্টসাধ্য। কোনো একটি জায়গায় আগুন দেওয়া সেকেন্ডের ব্যাপার। তারপরও হাতেনাতে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা যে ভয়াভয় পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছিল সেটা পারেনি।
তিনি বলেন, সাইবার দুনিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষের বিচরণ। আমাদের সাইবার পেট্রোলিং চলছে। কেউ যদি সাইবার স্পেসে নাশকতার পরিকল্পনা করে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৬, ২০২৩)