১২ দিন কাজ বন্ধ থাকার পর ইউএনওর পরিদর্শন
নবীনগরে বীর নিবাসে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের পর ঠিকাদারকে বিল না দেয়ার হুশিয়ারী ইউএনওর
বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য নির্মাণাধীন একটি বীরনিবাসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, এমন অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়ায়, ঠিকাদারকে কাজ শেষে 'বিল' না দেয়ার কঠোর হুঁশিয়ারী দিলেন ইউএনও তানভীর ফরহাদ শামীম।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চিত্রি গ্রামে নির্মাণাধীন 'বীর নিবাস' পরিদর্শন শেষে নির্মাণ কাজে অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পাওয়ায়, সাংবাদিকদের সামনেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে তিনি এই কঠোর হুঁশিয়ারী দেন।
এসময় ঠিকাদার লিয়াকত আলীকে সতর্ক ও ভৎসনা করে ইউএনও তানভীর শামীম বলেন'এই বীর নিবাস নির্মাণে সরকারি নির্দেশনার শতভাগ সিডিউল মানা না হলে, এ কাজের যাবতীয় বিল প্রদান বন্ধ থাকবে।'
তবে কাজ শেষে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এর নির্মাণ কাজে সন্তুোষ প্রকাশ করে যদি লিখিত 'প্রত্যয়ণ' প্রদান করে, তবেই কেবল ঠিকাদারকে কাজের বিল প্রদান করা হবে বলেও জানান ইউএনও।'
এ সময় ঠিকাদার লিয়াকত আলী নির্মাণ কাজে অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, 'এখন থেকে সরকারি সিডিউল অনুযায়ি এবং ইউএনও স্যারের নির্দেশনায় এই বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ করা হবে। ইনশাল্লাহ এর নির্মাণে কোন ত্রুটি আর হবে না।'
এ সময় প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বৃদ্ধার কাছ থেকে ৫১ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়ে ঠিকাদার বলেন, 'ওই টাকা তাদের প্রয়োজনেই 'লাল বালু' কেনার জন্য তিনি আমাকে নয়, বালু ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন।'
এ সময় সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার নবীনগর পশ্চিম ইউনিয়নের চিত্রি গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার পেশকার মিয়ার পরিবারকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীরনিবাসে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। মাস দেড়েক আগে এই বীরনিবাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। কিন্তু সরকারি চুক্তি অনুযায়ী মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও, নির্মাণ কাজে সেটি মানা হয়নি। ভুক্তভোগীরা জানান, নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, নিম্নমানের ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী।
এ বিষয়ে সম্প্রতি মৌখিকভাবে অভিযোগ করা হলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পিআইও অফিস গত ৫ অক্টোবর নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। সেই থেকে ১২ দিন হলো এর নির্মাণ কাজ এখনও বন্ধ রয়েছে।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন, তদারকি ও দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে বর্তমানে নবীনগর উপজেলায় ১৩১টি বীরনিবাস নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি প্যাকেজে ১ কোটি ৪০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে পাঁচটি করে মোট ১০টি ঘর নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোনিয়া এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে রয়েছে চিত্রি গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার পেশকার মিয়ার পরিবারের ঘরটিও।
চিত্রি গ্রামে গতকাল সরজমিনে এই বীর নিবাস দেখতে গেলে, প্রয়াত সুবেদার পেশকার মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঠিকাদার বিল্ডিংডা করতে উন্নত মানের ইট বালু কিনার কথা কইয়া কিছু দিন আগে আমার কাছ থাইক্যা দুই বারে মোট ৫১ হাজার টাকা নিছে। কিন্তু এরপরও এই ব্যাডা (ঠিকাদার) বিল্ডিংডার মধ্যে খুব বাজে কাম করায়, বিল্ডিংয়ের ইট ধরলেই খুইল্যা যায়।’
তবে সোনিয়া এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ঠিকাদার লিয়াকত আলী বলেন, ‘রাজমিস্ত্রিরা কাজ করার সময় কিছুটা ত্রুটি ধরা পড়ায় পিআইও অফিস থেকে লোক গিয়ে গত ৫ অক্টোবর এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।'
ঠিকাদার জানান, কাজটি বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার ইউএনও স্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই সিডিউল অনুযায়ি কাজটি আবার ২/১ দিনের মধ্যে শুরু করবো।'
তবে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর কাছ থেকে ৫১ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ আবারও অস্বীকার করে বলেন, ওই টাকা তাদের প্রয়োজনেই লাল বালু কেনার জন্য তিনি আমাকে নয়, মূলত বালু ব্যবসায়ীকে দিয়েছেন।'
(জিডি/এসপি/অক্টোবর ১৭, ২০২৩)