মাদারীপুরে মদপানে দুই বান্ধবীর মৃত্যু, অসুস্থ আরো দুইজন, আটক ৩
মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকায় দেশি ও বিদেশি মদ খেয়ে সাগরিকা আহমেদ (২০) ও পারুল আক্তার রুপা (২০) নামের দুই বান্ধবী মারা গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো দুইজন। এই ঘটনায় আটক আছেন তিনজন। আজ রবিবার সকালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে লাশ আনা হয়েছে।
নিহত সাগরিকা শহরের উকিলপাড়া এলাকার কে এইচ শাকিল আহমেদের মেয়ে ও পারুল আক্তার রুপা ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম এলাকার মালেক মাতুব্বরের মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর পৌরসভার কলেজ রোড এলাকার লুৎফর মোল্লার বাসার ৪ তলায় অক্টোবরের এক তারিখে ভাড়া নেন সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি তার মেয়ে সাগরিকা আহমেদ ও ভাই মো. বাবুকে নিয়ে ঐ ভাড়া বাসায় থাকেন।
আজ রবিবার ভোররাতে হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুনে রুমে ছুটে যান বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার। পরে ফ্লোরে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন সাগরিকা আহম্মেদ ও তার বান্ধবী পারুল আক্তার রুপাকে। সকালে সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিন (৪৫) ও তার মামা বাবু (৪০) ও ডালিয়াকে (৪২) উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ সময় অসুস্থ থাকায় বাবু ও ডালিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা পুলিশের নজরদারীতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৃত সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে।
নিহত সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার মেয়ে সাগরিকার বান্ধবী পারুলসহ তিনজন মেয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। রাতে আমি রান্না করি। পরে সবাই মিলে সেই খাবার খাই। এরপর ডালিয়া ও পারুল দুজনে মিলে দেশি ও বিদেশী মদ আনেন। সেই মদ খেয়ে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। পরে দেখি আমার মেয়ে সাগরিকা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি তার মাথায় তেল দেই। এরপর নিচে গেট খুলতে কেয়ারটেয়ারকে ডাকতে যাই। তখন এসে দেখি আমার মেয়ে মারা গেছে। এর কিছুক্ষণ পর ওর বান্ধবী পারুলও মারা যায়।
নিহতের মামা মো. বাবু বলেন, আমার বাড়ি নাটোর। আমি এখানে আমার বোনের সাথে থাকি। এক বছর হলো এখানে এসেছি। এখানে একটি ইটভাটায় কাজ করি। রাতের বেলায় আমার ভাগ্নি ও ওর কয়েকজন বান্ধবী মিলে দেশি ও বিদেশী মদ খাই। এরপর ঘুমিয়ে পরি। পরে জেগে দেখি আমার ভাগ্নি অনেক অসুস্থ। বুক জ¦লে বলছিলো, ডাক্তারের কাছে নেয়ার আগেই সে মারা যায়। পরে ওর বান্ধবী পারুলও মারা গেছে।
অসুস্থ ডালিয়া বলেন, আমার বাড়ি পুরানবাজার। আমি ইটভাটায় কাজ করি। সবাই মিলে আনন্দ করার জন্য মদ এসেছিলাম। সাগরিকা আনতে বলেছিলো। এদের (কাদের কাছ থেকে মদ আনছে তা বলেনি) কাছ থেকে মদ এনেছি। আমিও খেয়েছি। রাতের বেলায় আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকবার বমিও করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি জানান, শনিবার রাতে ঐ বাসায় অপরিচিত ৩ থেকে ৪ জন নারীকে ঢুকতে দেখি। পরে এই ঘটনার পর অন্য নারীদের দেখা যায়নি।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, দুইজন নারীকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরির্দশণ করেছেন। এসময় তিনি বলেন, মাদারীপুর সরকারী কলেজের পিছনে একটি বাসার চারতালায় সাবিনা ইয়াসমিন তার মেয়ে সাগরিকা ও ভাই বাবুকে নিয়ে ভাড়া করে থাকেন। প্রাথমিকভাবে জেনেছি শনিবার রাতে সাগরিকার তিন বান্ধবী ঐ বাসায় বেড়াতে আসেন। এরপর তারা সবাই মিলে দেশি ও বিদেশি মদ খান। এরপর তারা কিছুক্ষণ নাচা-নাচি করে ঘুমিয়ে পরেন। পরে জেগে দেখেন সাগরিকা ও তার বান্ধবী মারা গেছেন। এই ঘটনায় আরো দুইজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা পুলিশের নজরদারীতে আছেন। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ওএস/এসপি/অক্টোবর ১৫, ২০২৩)