আজ সেই ১০ অক্টোবর
পাথরঘাটা শিংড়াবুনিয়া গণহত্যা দিবস পালন
অমল তালুকদার, পাথরঘাটা : পুষ্পমাল্য অর্পন, শোক র্যালী ও আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে বরগুনার পাথরঘাটা শিংড়াবুনিয়া (পশ্চিম মানিকখালী) গণহত্যা দিবস পালন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১০ টায় পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসন, বরগুনা সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা-৭১, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানি'র উদ্যোগে সাত শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্প স্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে এ দিনটিকে স্মরণ করা হয়।
এসময় বক্তব্য রাখেন, পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. খালেক, পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিন সোহেল, নাচনাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন খান, উপজেলা কৃষি অফিসার শওকত হোসেন, নকুল বালা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন।
১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর এই দিনে বরগুনার পাথরঘাটার পশ্চিম মানিকখালী শিংড়াবুনিয়া শহীদ পরিবারের উপরে বর্বরোচিত পাক হানাদারের অত্যাচার ও গণহত্যার কথা আজও ভূলতে পারেনি স্বজনেরা। সেদিন পাক হানাদার রাজাকার ও শান্তি কমিটির সহায়তায় গানবোট যোগে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের খুজতে এসে না পেয়ে ব্যাপারী বাড়ি, হাজরা বাড়ি, গয়ালী বাড়ি, বালা বাড়ি ও হাওলাদার বাড়ী, চারদিকে থেকে ঘেরাও করে চন্দ্র কান্ত হাজরা, অশ্বিনী কুমার বালা, লক্ষ্মিকান্ত গয়ালী, নিত্যানন্দ বেপারী, মনোরঞ্জন বেপারী, খিরোদ চন্দ্র বেপারী ও অনন্তু কুমার হালদারকে চোখ বেধে পার্শ্ববর্তী হরের খালে নিয়ে এসে ব্রাশ করে হত্যা করে এবং তাদের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ পুড়িয়ে দেয় ঘরবাড়ি।
প্রতি বছর ১০ অক্টোবর শিংড়াবুনিয়া গনহত্যা দিবস পালন করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর স্মরনে ফারিয়ালারা ফাউন্ডেশন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্মান করা হয়েছিল স্মৃতিসৌধ। কিন্তু তা দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত থাকায় তৎকালীন বরগুনা সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা-৭১, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধকে জানি' ও তৎকালীন বরগুনা জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ পুনরায় সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন।
আমিন সোহেল বলেন,১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর তৎকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান ও মকবুল হোসেনের নির্দেশে পাকবাহিনীর সদস্যরা হাত-পা এবং চোখ বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে হরের খালের পারে রেখে যায়। আজও সেই শহীদদের মুল্যায়ন করা হয়নি। তাদের পরিবার কে সাবলম্বী করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ পাথরঘাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক অমল তালুকদার বলেন,ঘটনাটি আজও এই জনপদের মানুষকে শিহরিত করে। একাত্তরের যুদ্ধের সেইসব টালমাটাল দিনের কথা নতুন প্রজন্মের জানা দরকার।
সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, স্মৃতি সৌধের পাশেই একটি নতুন সেতু হয়েছে, যা তৎকালীন পুল ছিলো। তাদের স্মরনে 'সাত শহীদ স্মৃতি সেতু ' নামে নামকরণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বাড়ির সামনে সড়কের নাম করন করা এখন সময়ের দাবি।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়া হচ্ছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আজও কোন ভাতার আওতায় আনা হয়নি। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ভাতার আওতায় আনার জন্য।
তিনি আরও বলেন, স্মৃতি সৌধ মেরামতের কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু করা হবে। সামনে সভায় 'সাত শহীদ স্মৃতি সেতু ' নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
(এটি/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২৩)