গদখালী ৫শ বছরের প্রাচীন কালি মন্দিরে চুরি, অর্থ-স্বর্ণালংকার লুট
স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোরের ঝিকরগাছায় ৫শ বছরের সুপ্রাচীন গদখালী সার্বজনীন কালি মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দিবাগত রাতে এঘটনা ঘটে। এসময় নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, বিভিন্ন মালামালসহ অন্তত দুই লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মন্দির কতৃপক্ষ জানিয়েছে।
মন্দিরের পুরোহিত কিংকর চক্রবর্তী জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি মন্দির তালাবন্ধ করে বাড়িতে যান। রাতে মন্দিরের পেছনের অংশে দুটি স্টিলের দরজা বাঁকা করে চোর ভেতরে ঢোকে। এসময় প্রনামী বাক্সের নগদ টাকা, পানির মটর, দেবির সোনার টিপ, নাকের সোনার নথ, দুই জোড়া রুপার নুপুর, রুপার মাদলি, সোনার কড়া, পিতলের ঝাজ, থালা, গ্লাস, ঘন্টা (কুষাকুষি) চুরি হয়ে যায়।
মন্দিরের সভাপতি সঞ্জিবন ভদ্র জানান, এর আগেও মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে আবারও চুরি হয়েছে, এতে অন্তত দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে মন্দিরে চুরির ঘটনা জানাজানি হলে সকাল থেকেই ভক্তরা মন্দিরে ভিড় জমাতে থাকে। ঘটনাস্থলে আসেন যশোর জেলা ও ঝিকরগাছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা এই ঘটনার দ্রুত সমাধান ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন।
ঝিকরগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন উক্ত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মন্দিরে চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, প্রায় ৫০০ বছর আগে পর্তূগিজ ডাকাত সরদার রডারিক এই অঞ্চলে ঘাঁটি করেছিলেন। সে স্থানীয় কমলেসের বাড়িতে ডাকাতি করতে গেলে তার সুন্দরী মেয়ে মাদালসার প্রেমে পড়েন তিনি। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে রডারিক ক্ষমা চেয়ে প্রেম নিবেদন করে ওয়াদা করে আর কখনো ডাকাতি করবে না। এক পর্যায়ে মাদালসার মন জয় করার জন্য বাড়ির পাশেই আশ্রয় নেয় রডারিক। মাদালসাকে পাওয়ার জন্য বাঘের সাথেও লড়াই করার ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার পর মুগ্ধ হয়ে মা কালির নামে রডারিককে বরণ করে নেয় মাদালসা। পরে দুজনেই সন্ন্যাসব্রত গ্রহন করে এবং তারা একটি মন্দির তৈরি করে। রডারিকের 'গড' এবং মাদালসার 'কালী' নিয়ে এই মন্দিরের নাম হয় 'গডকালী মন্দির'। কালের আবর্তে সেটাই আজ গদখালী কালী মন্দির।
মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সুভাস ভক্ত বাবুল জানান, আনুমানিক ১৪৬২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এ কালী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে বহু ভক্তের সমাগম হয়। কয়েকশ বছর ধরে প্রতি বছর বাংলা সনের পৌষ মাসের আমাবস্যা তিথিতে ৩দিনের জন্য শুরু হয় পৌষমেলা। দেশের ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী ও ভক্তের মিলনমেলায় পরিণত হয় এ মেলা।
(এসএ/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০২৩)