মনু নদীতে ঐতিহ্যে’র নৌকা বাইচ, দু'পাড়ে বাঁধভাঙা উল্লাস
মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে মনু নদীতে নৌকা বাইচের ইতিহাস অনেক প্রাচীণ। মাঝে-মধ্যে নানা কারণে গ্যাপ হলেও প্রাচীণকাল থেকেই বছরে একবার মনু নদীতে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। আবহমান গ্রাম-বাংলার এই নৌকা বাইচ ঘীরে মাঝিমাল্লাদের প্রস্তুতির পাশাপাশি নদীর দু’পাড়ে জড়ো হন দূরদূরান্তের হাজার হাজার দর্শনার্থী। এবারও ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ৭ বছর পর মনুনদীতে হয়ে গেলো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান এর প্রচেষ্টায় পৌরসভার আয়োজনে মনু নদীর চাঁদনীঘাট ব্রীজের নীচ থেকে প্রথম রাউন্ডের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শেষ হয় বলিয়ারভাগ খেয়া ঘাটে।
এতে অংশ নেয় মৌলভীবাজার জেলার ৫ টি, সুনামগঞ্জ জেলা থেকে ২ টি ও হবিগঞ্জ থেকে ১ টি নৌকা। সর্বমোট ৮ টি নৌকা অংশ নিলেও ফাইনাল রাউন্ডে টিকে যায় ৩ টি নৌকা।
সবশেষে বিকাল পৌনে ৬টার দিকে শুরু হয় ফাইনাল রাউন্ডে অংশ নেয়া ৩ টি নৌকার প্রতিযোগিতা। এতে প্রথমস্থান অর্জন করে রাজনগর উপজেলার কাবুল মিয়ার শাহমোস্তফার তরী। ৬০ থেকে ৭০ ফুট দৈর্ঘের ওই নৌকাটি ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার নৌকা বাইচে অংশ নিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে বন্দুক ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে শাহপরানের তরী। বিজয়ী ৩ টি নৌকা মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অংশ নেয়।
সন্ধ্যার দিকে মনু নদীর তীরবর্তী বলিয়ারবাগ খেয়াঘাটে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমেদ। পৌর মেয়র ফজলুর রহমান এর সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম ও পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম ।
দুপুর সাড়ে ৩টায় যখন শুরু হয় নৌকা বাইচ। তখন বাইচ দেখতে নদীর দু’পাড়ের দু'কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জড়ো হন প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। নৌকা বাইচে অংশ নেয়া মাঝিদের বৈঠার গতি বাড়ার সাথে সাথে দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত দর্শনার্থীদেরও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পানির ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের পাশাপাশি নৌকার গলুই-এ বসে গায়েন যখন নানা অঙ্গভঙ্গিতে মত্ত, তখন দর্শনার্থীর মনে সৃষ্টি হয় নতুন প্রাণের সঞ্চার।
এবছর মনু নদীর শান্তিবাগ পাড়ে পৌরসভা কতৃক নতুন বিনোদন স্পট ওয়াকওয়ে নির্মাণ করায় দর্শকদের নৌকা বাইচ দেখতে বাড়তি সুবিধা যুগিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের আগে ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে মনু নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩)