বিনোদন ডেস্ক : চলে গেলেন অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালি’সহ অনেক সিনেমার সিনেম্যাটোগ্রাফার সৌম্যেন্দু রায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে নিজ বাসভবনে প্রয়াণ ঘটে তার। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন সৌম্যেন্দু।

সত্যজিৎ রায়ের গল্প ভাষা পেয়েছে সৌম্যেন্দুর ক্যামেরার ছবিতে। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা মানেই যার নাম সিনেম্যাটোগ্রাফার হিসেবে জ্বলজ্বল করেছে অধিকাংশ সিনেমায় তিনি সৌম্যেন্দু রায়। ভারতের জনপ্রিয় রূপকলা কেন্দ্রের ক্যামেরার বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন তিনি। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ সিনেম্যাটোগ্রাফার্স’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সৌম্যেন্দু রায়।

সিনেম্যাটোগ্রাফারের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে তিনি লেখেন, বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফার সৌমেন্দু রায়ের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। প্রবাদপ্রতিম চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে উনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ‘তিন কন্যা’, ‘অশনি সংকেত’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-র মতো অনেক সিনেমার ক্যামেরার দায়িত্ব পালন করেছেন সৌমেন্দু রায়। তার সেসব অসাধারণ কাজ দর্শক এখনো মনে রেখেছেন। তিনি চিত্রপরিচালক তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, এম এস সথ্যু প্রমুখের সিনেমাতেও কাজ করেছেন।

তিনি আরও লেখেন, সিনেমাটোগ্রাফির পাশাপাশি তিনি রূপকলা কেন্দ্রের উপদেষ্টাও ছিলেন। বাংলা তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য আমাদের সরকার তাকে ২০১২ সালে ‘বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার’ ও ২০১৫ সালে ‘চলচ্চিত্র পুরস্কার (সারা জীবনের অবদান)’ প্রদান করে। এছাড়া তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তার প্রয়াণে চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি সৌমেন্দু রায়ের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা তৈরির সেই ইউনিটের শেষ জীবিত সদস্য ছিলেন সৌম্যেন্দু রায়। আজ সেই অধ্যায়েরও পরিসমাপ্তি ঘটলো। সত্যজিৎ রায়ের ২১টি সিনেমার প্রত্যেক ফ্রেম দর্শক দেখেছেন সৌম্যেন্দু রায়ের ধরা লেন্সেই। যে তালিকায় অবশ্যই রয়েছে ‘পথের পাঁচালি’। সিনেমার ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন, পরে নিজের দক্ষতায় গুণী সিনেম্যাটোগ্রাফার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

সৌম্যেন্দু রায়কে ১৯৬০ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’-এর ক্যামেরার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের পেশাগত বন্ধন অটুট ছিল ১৯৯২ সাল, অর্থাৎ সত্যজিতের মৃত্যু পর্যন্ত। তবে কেবল সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাতেই নয়, সৌম্যেন্দু সিনেম্যাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন তপন সিন্হা, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের একাধিক বিখ্যাত সিনেমায়।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩)