ভোলার তজুমদ্দিনে উপজেলা পরিষদের খাস জমি দখলের উৎসব, মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য
ভোলা প্রতিনিধি : ভোলার তজুমদ্দিনে "ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন' কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্য দাগ ও খতিয়ানভুক্ত জমির সাফ কবলা দলিল রেজিষ্ট্রেশন সম্পাদন করে উপজেলা পরিষদের খাস জমির দখল হস্তান্তর করেছে মিঠুন দেবনাথ নামে এক স্বর্ণ কারিগর। গত আটাশ আগস্ট সম্পাদিত তজুমদ্দিন সাব রেজিস্টার অফিস এর১৫২৬ নং কবলা দলিল মূলে শশীগঞ্জমৌজার ৭১২ খতিয়ানভুক্ত ১০০৪, ১০০৭, ১০০৮, ১৫৮৯, ১৫৯০, ১৫৯৬ দাগের মোট ১৬.১২ শতাংশ জমি বিক্রি করে মিঠুন। এরপর সুকৌশলে যথাস্থানে দখল না বুঝিয়ে দিয়ে উপজেলা পরিষদের কৃষি অফিস এর দক্ষিণ পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন সরকারের অধিগ্রহণকৃত ৪৩৫০ দাগের খাস জমিতে দখল হস্তান্তর করে।
শুধু তা-ই নয়, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অন্য দাগের জমি দেখিয়ে "জমি আছে ঘর নাই" প্রকল্প থেকে আগেই একটি টিনশেড ঘর থাকা সত্ত্বেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রাপ্ত ঘর উক্ত খাস জায়গায় স্থাপন করে অবৈধ দখল পাকাপোক্ত করে। উপরন্তু সেই ঘর এক বছর যাবৎ বে আইনীভাবে পরিতোষ শীল নামক জনৈক ব্যক্তির নিকট ভাড়া দেয় মিঠুন। এরপর গত আটাশ আগস্ট তাও বে-আইনী ভাবে বিক্রি করে দেয়। সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলা পরিষদের ৪৩৫০ দাগের মধ্যে মিঠুন দেবনাথের অপর একটি টিনশেড ঘর রয়েছে।
বছরখানেক আগে স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের জন্য একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণকালে তৎকালীন এসিল্যান্ডের নির্দেশে সার্ভেয়ার কতৃক পরিমাপ সম্পন্ন করার সময় বিষয়টি প্রথম স্থানীয়দের নজরে আসে। কৃষি অফিস এর সীমানা প্রাচীর থেকে পঞ্চাশ ফুট পশ্চিম বরাবর কাঠ দিয়ে সীমানা চিহ্ন স্থাপন করে তৎকালীন ভূমি অফিস এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ। কিন্তু কয়েকমাস যেতেই ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর নিষ্ক্রিয়তায় সীমানা কাঠ গায়েব করে ফেলে। খাস জমি উদ্ধারে মাননীয় ভূমিমন্ত্রী তথা জেলা প্রশাসনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে ভূমি অফিস গত দু'বছর সরকারি সম্পত্তির এরুপ অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এরই ধারাবাহিকতায় মিঠুনের শ্বশুর সুকুমার দেবনাথ নিজে উপস্থিত হয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে কথিত স্থানীয় সার্ভেয়ার জামাল উদ্দিন মনগড়া পরিমাপ করে খাস জমিতে প্রকাশ্যে সীমানা পিলার স্থাপন করে ও প্রতারণামূলকভাবে উক্ত জমির দখল হস্তান্তর করে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে অপরিচিত কিছু লোকজন নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয় মিঠুন ও তার শ্বশুর সুকুমার।
এদিকে কয়েকমাস আগে জেলা প্রশাসকদের খাস জমি সহ ছয় ধরনের জমি উদ্ধার করার নির্দেশ প্রদান করেন ভূমিমন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে খাস জমি উদ্ধার করার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে দিনে দুপুরে রহস্যজনকভাবে এরূপ খাস জমি অবৈধ হস্তান্তর ও দখলের ঘটনা ঘটেছে। প্রতারক মিঠুন সবকিছু জানা সত্ত্বেও কোন খুঁটির জোরে ও কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির রক্তচক্ষুর দাপট দেখিয়ে সরকারি সম্পত্তি দখল ও হস্তান্তরের দুঃসাহস দেখালো এমন প্রশ্ন ঘুরছে জনমনে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তথা ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ভূমি, শুভ দেবনাথ জানান, "আগামীকালই বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করে নিশ্চিত হয়ে খাস জমি উদ্ধারে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে"।
(সিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩)