নাটোর-৪ আসনের এমপি আব্দুল কুদ্দুস আর নেই
অমর ডি কস্তা, নাটোর : উত্তরবঙ্গের কিংবদন্তি খ্যাত রাজনৈতিক নেতা নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের ৫ বারের নির্বাচিত ও বর্তমান সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস আর বেঁচে নেই। বুধবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে তিনি ঢাকা ইউনাইটেড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর। তার মৃত্যুতে নাটোর জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফেসবুক জুড়ে শোকবার্তা প্রকাশ করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, তার অনুসারী ও শুভাকাঙ্খীরা। সোমবার সন্ধ্যায় নাটোরের গুরুদাসপুরে নিজ বাসভবনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বুধবার সকালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি ৩১ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের চলনবিল এর বিলসা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। পিতা হায়েতুল্লাহ সরদার পেশায় ছিলেন কৃষক ও মাতা মোছা: গুলেনুর বেগম ছিলেন গৃহিণী। ৭/৮ বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। সেই ছোট বেলায় পিতৃহারা চলনবিলের মধ্যে একটি গ্রাম থেকে উঠে এসে রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন এবং ইংরেজীতে এম এ পাশ করেছেন। রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। ১৯৬৮-৭২ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন । ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস রাজশাহী অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি (১৯৭২-৭৪) রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু-কে হত্যার পর তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী রাজশাহী জেলায় যে ব্যক্তিকে প্রথম গ্রেফতার করেন তিনি আব্দুল কুদ্দুস (১৯৭৫ এর ১৭/১৮ আগস্ট)। দীর্ঘ ৫ বছর তিনি কারাভোগ করেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮২-৮৬ পর্যন্ত রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী মহানগর গঠিত হলে ১৯৮৬-১৯৯০ পর্যন্ত তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সামরিক শাসকের অবসানের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য হন। তিনি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নির্বাচনী এলাকা-৬১, নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর) আসনে সর্বমোট ৭ বার দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে অংশ নিয়ে ৫ বার (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮) এমপি হিসেবে বিজয়ী হন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তার একমাত্র কন্যা অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেছেন। অ্যাডভোকেট কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কার্য্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও জয় বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড-২০১৭ বিজয়ী সংগঠন "কল্লোল ফাউন্ডেশন" এর প্রতিষ্ঠাতা। একমাত্র ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বীন কুদ্দুস শোভন ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তিনি পিতার পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে সক্রিয়।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রতœা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন, বড়াইগ্রাম পৌর মেয়র মাজেদুল বারী নয়ন, বড়াইগ্রাম কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি অমর ডি কস্তা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ।
(এডিসি/এএস/আগস্ট ৩০, ২০২৩)