কর্ণফুলী ইউএনও’র কাছে অভিযোগ
১৬ বছর ধরে শূণ্য পদে কাজীর দায়িত্ব পালন করে প্রতারণা!
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে অতিরিক্ত কাজী দাবিদার কাজী শরফুদ্দীন মোঃ সেলিম ও জুলধার কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবাহ রেজিস্ট্রি করে অর্থ আদায় করে দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের কাজী সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম।
গত ৩ আগষ্ট কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশীদের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন। দুই পৃষ্টার এই অভিযোগের সাথে ১০ পাতার তথ্য প্রমাণ সংযুক্ত করেছেন বলে জানা যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের কর্মরত বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার। চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে ২০০৭ সালে কাজী নুরুল হুদা অবসর নেওয়ায় পদটি শুন্য হয়। এতে পটিয়া উপজেলার ৫ নং হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের কাজী শরফুদ্দীন মোহাম্মদ সেলিম ২০০৭ সালের ১৪ই মার্চ অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তৎকালীন সময়ের আইনে ছিল অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে শুধু পার্শ্ববর্তী এলাকার কাজী।
আর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালযয়ের পরিপত্র অনুযায়ী অতিরিক্ত কাজীর দায়িত্বের মেয়াদ থাকবে ৬০ দিন। ৬১ দিনে স্বয়ংক্রীয়ভাবে ওই অতিরিক্ত দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে। কোন অবস্থাতেই দ্বিতীয় বার একই ব্যক্তিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। অভিযোগ সুত্র বলছে, ২০০৭ সালের ১৪ মে ৬০ দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন শেষ হলে আইন অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৫ মে পদটি শূন্য হয়। কিন্তু আজ থেকে ১৬ বছর আগে কাজী হিসেবে দায়িত্ব না থাকলেও চরপাথরঘাটার অতিরিক্ত কাজী দাবি করছেন কাজী শরফুদ্দীন মোহাম্মদ সেলিম ও জুলধার কামরুল।
এমনকি ২০০৭ সালের ১৫ মে থেকে তার কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গন্য হয়। তার অবৈধ কার্যক্রম চালু রাখতে দুই বছর পর শরফুদ্দীন মোঃ সেলিম, প্রাক্তন কাজীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কামরুল ইসলাম মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে হাইকোর্টে ৭৯৮৫/২০০৯ একটি রীট মামলা করে কাজী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা চলমান রাখে। ওই রীটে শরফুদ্দীন মোঃ সেলিম বাদী/ বিবাদী কেউ না হওয়ায় আদালত সেলিমকে কোন আদেশ দেননি। অভিযোগে আরও জানা গেছে, শরফুদ্দীন মোঃ সেলিমের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন অফিস ম্যানেজ করা। কামরুল ইসলামের কাজ হচ্ছে বাল্য বিবাহে জাল দস্তখত দিয়ে বিবাহ রেজিষ্ট্রী করা।
২০১০ সালে পরবর্তীতে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় নজরুলকে একাধিক বার অতিঃদায়িত্ব প্রদান করেন। এ নিয়ে শরফুদ্দীন মোঃ সেলিম হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্টে মামলা মোকাদ্দমা করে সবদিকে পরাজিত হয়। সবর্শেষ জেলা রেজিস্ট্রার ২০২২ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ৩১৩ নং স্মারকে নজরুলকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। একইদিন ৩১৩ (৬) নং স্মারকে সেলিমের অতিরিক্ত দায়িত্ব স্পষ্ট করে বাতিল ঘোষণা করেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ পটিয়া উপজেলার ৫ নং হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের কাজী শরফুদ্দীন মোঃ সেলিম এবং জুলধার কামরুল ইসলাম নামীয় ব্যক্তি চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের কাজী দাবী করে ব্রীজঘাট কাঁচা বাজার নুর মার্কেটের ২য় তলায় কাজী অফিস খুলে অবৈধ ভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রি করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলেও একই তত্য মিলে, চরপাথরঘাটায় কামরুল ইসলাম নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। এমনকি সাইনবোর্ডে কাজী পরিচয়ে সাটানো হয়েছে নিজের মোবাইল নম্বরও। এলাকার লোকজন দাবি তুলেছেন,অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে কে বৈধ আর কে অবৈধ কাজী। জেলা রেজিস্ট্রারের সুনজর প্রত্যাশা করেছেন। সাধারণ মানুষ চান বৈধ কাজীর অফিস বলবৎ থাকুক। আর যাকে সরকার দায়িত্ব দিয়েছেন সে নিজে অফিসে এসে দায়িত্ব পালন করুক। কাজীর নাম দিয়ে প্রতারণা বন্ধ করুক।
অতিরিক্ত কাজী দাবিদার শরফুদ্দিন মোহাম্মদ সেলিম ও কামরুল ইসলাম কে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন লাইন বিছিন্ন করেন এবং কথা বলতে রাজি হননি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘চরপাথরঘাটার কাজী নিয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব। কাজী ছাড়া অন্য কেউ নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের কাজ সম্পাদন করতে পারেন না।’
(জেজে/এএস/আগস্ট ০৪, ২০২৩)