শরীয়তপুরে মুক্তিপণের লোভে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা, কিশোর গ্যাং এর ৪ সদস্য আটক
কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নে নিবির হোসেন (১১) নামে এক শিশুকে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দাবীতে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। অপহরণ ও হত্যাকান্ডে জড়িত কিশোর গ্যাং এর ৪ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিবিরের পরিবার ও এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতন।
মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে সদর উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের একটি বাগান থেকে মাটিচাপা অবস্থায় শিশু নিবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত নিবির সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির খান ও নিপা আক্তার দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান। নিবির শরীয়তপুর জেলা শহরে অবস্থিত শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
হত্যাকান্ডে জড়িত আটককৃত কিশোর গ্যাং সদস্যরা হলো, পাবনা সদর থানার সিংগা বাজার এলাকার সাইফুল সরদারের ছেলে মাহেন্দ্র চালক সিয়াম সরদার (২০), শরীয়তপুর সদর উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের জলিল গাজির ছেলে শাকিল গাজী (১৮), আমির হোসেন গাজীর ছেলে তুহিন গাজী (১৫) ও আসকার আলী চৌকিদারের ছেলে শাওন চৌকিদার (১৭)।
মঙ্গলবার দুপরে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম সংবাদ কর্মীদের জানান, গতকাল সোমবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিবিরের দাদা মমিন আলী খান শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, তার নাতি নিবিরকে কে বা কারা অপহরণ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবী করছে।
অপহরণের সংবাদ পাওয়া মাত্র বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ), অফিসার ইনচার্জ পালং মডেল থানা ও ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় নিবিরকে উদ্ধার ও অপহরনকারিদের আটকের কার্যক্রম শুরু করেন।
মোবাইল ফোনের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে প্রথমে সিয়ামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে অপহরণের কথা স্বীকার করে এবং তার সহযোগি শাকিল গাজী, তুহিন গাজী ও শাওনের নাম প্রকাশ করে। শাকিল, তুহিন ও শাওনকে আটক করারর পর ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আজ (মঙ্গলবার) ভোর ৫টার দিকে তারা স্বীকারোক্তি প্রদান করে যে, ঘটনার ৩ দিন পূর্বেই তারা নিবিরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকাল অনুমান ৪টার পরে ভিকটিম নিবিরকে তার বাড়ির আশপাশ এলাকা থেকে কৌশলে একই গ্রামের জলিল খা'র ইটের ভাটা সংলগ্ন জনৈক আলী হোসেন খা'র বাড়ির পিছনে একটি নির্জন বাগানে নিয়ে যায়। কিন্তু ভিকটিম নিবির সেখান থেকে চলে আসার জন্য ডাক চিৎকার করতে গেলে তাৎক্ষণিক অপহরণকারী সিয়াম, শাকিল ও তুহিন ভিকটিম নিবিরকে হাত পা চেপে ধরে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর নিবিরের মরদেহ মাটির গর্তে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে অপহরণকারীরা ভিকটিমের মা নিপা আক্তারকে মোবাই ফোনে জানায়, তারা নিবিরকে অপহরণ করেছে। দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিলে তারা নিবিরকে ছেড়ে দিবে। এরপর ওই মোবাইলটি অপহরণকারিরা বন্ধ করে দেয়।
অপহরণকারীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ আজ সকাল ৬ টার সময় ঘটনাস্থল খিলগাঁও আলী হোসেন খা'র বাড়ির পিছনে নির্জন বাগানের গর্তের মধ্যে থেকে নিবিরের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
নিবিরের মামা ইকবাল খান বলেন, আমার ভাগ্নেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। এর সাথে জরিত অন্য কেউ থাকলেও তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাই।
পালং মডেল থানা ওসি মোঃ আকতার হোসেন বলেন, সোমবার রাতেই প্রথমে অপহরনের মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার আটককৃত ৪ আসামীসহ সন্দেহজনক কয়েকজন সহ হত্যা মামলার পর আসামীদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শিশুটিকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে অধিক তদন্ত চলছে।
(কেএনআই/এএস/আগস্ট ০১, ২০২৩)